Tuesday, August 27, 2019

Radio Dhol Limited Edition Show & DGcon 2019

রেডিও ঢোল 
গত মাসের নয় তারিখে রেডিও ঢোল থেকে ডাক পেয়েছিলাম কায়সার কবির ভাইয়ের শো লিমিটেড এডিশনে আড্ডা মারার জন্য। গিয়ে আড্ডা মেরে এসেছিলাম কায়সার ভাইয়ের সাথে। কথা বলেছিলাম লুঙ্গিম্যান সহ আমার বিভিন্ন প্রজেক্ট আর প্রিয় কমিক্স+কমিক্স আর্টিস্টদের নিয়ে। দারুণ মজার মানুষ একটা এই কায়সার ভাই। 

(রেডিও ঢোলের স্টুডিওতে। অনেক কষ্টে নিঃশ্বাস চেপে রেখে ভুরি লুকিয়েছিলাম। :3)

DGCon 2019
এই বছরের মার্চ মাসে মাইটি পাঞ্চ স্টুডিও এর সামির ভাই ডাক দিলেন মিস শাবাস এর তিন নাম্বার ইস্যুতে কাজ করার জন্য। পেন্সিলিং ছিল আসিফ ভাইয়ের তাই টুক করে রাজি হয়ে গেলাম। ২০ পেইজের এই কমিক্সে দশ পেইজের ইঙ্ক আর কালার করেছিলাম আমি। গল্পটা খুবি দারুণ আর ইন্টেরেস্টিং এই সংখ্যার। যার কারনে কাজ করে মজা পেয়েছিলাম। বইটা পাবলিশ হলো এপ্রিলে আর জুলাইয়ের ১৯ তারিখে হয়ে যাওয়া DGCon 2019 এ আপকামিং কমিক্স আর পাবলিশড কমিক্স নিয়ে মাইটি পাঞ্চের প্যানেল ডিসকাশন ছিল। সে কারনে সামির ভাই থাকতে বললেন প্যানেলে। 

১৯ তারিখে গেলাম ভেন্যু যমুনা ফিউচার পার্কে। বেশ দারুণ লেগেছে অভিজ্ঞতাটা। কিছু ছবি তুলে রাখি ব্লগে।



জীবনের প্রথম কমিক্স প্যানেল ডিসকাশন। থ্যাংকস টু মাইটি পাঞ্চ স্টুডিও।

Unmad MAD Tribute Cartoon Exhibition 2019

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে লেজেন্ডারি MAD ম্যাগাজিন। এই লেজেন্ডারি ম্যাগাজিনের জন্য আমাদের দেশি লেজেন্ডারি স্যাটায়ার ম্যাগাজিন উন্মাদ আয়োজন করেছিল "Tribute to MAD কার্টুন প্রদর্শনী" শিরোনামে তিনদিনব্যাপী (২৩শে অগাস্ট - ২৫শে অগাস্ট) এক এক্সিবিশনের। দৃক গ্যালারিতে হয়ে যাওয়া এই এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন প্রফেশনাল থেকে শুরু করে বিগিনার পর্যন্ত বাংলাদেশি একঝাঁক নবীন প্রবীণ কার্টুনিস্ট আর ভিজুয়াল স্টোরিটেলারের দল। এক্সিবিশনের জন্য আর্টওয়ার্ক জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ৩০ শে জুলাই। আমি বাড়ি গিয়েছিলাম জুলাই মাসে যার কারনে আলসেমি করার রিস্ক নেইনি অন্যান্যবারের মত। বাড়ি যাওয়ার আগেই দুইদিন সময় নিয়ে অন্যান্য কাজের ফাঁকে এঁকে ফেললাম একটা ছবি। ইদানিং মাথায় রোবট আর মেকা ড্রয়িং এর ভুত চেপেছে। তাই ম্যাড ম্যাগাজিনের আইকনিক মাস্কট Alfred E. Neuman এর একটা ফিউচারিস্টিক রোবট ভার্শন এঁকে মেইল করে দিলাম বস আহসান হাবিবের মেইল অ্যাড্রেসে। একটাই কার্টুন পাঠিয়েছিলাম আমি আর ওটাই সিলেক্টেড হয়েছে অন্যান্য সব দারুণ কার্টুন আর আর্টওয়ার্কের মাঝে। কিছু ছবি তুলে রাখি ব্লগে। 
Robot Alfred E. Neuman in 2077
(cyberpunk 2077 থেকে ইন্সপায়ার্ড)
আমার আঁকা কার্টুনের পাশে বস আহসান হাবিব
ছবিটি তুলেছে ইব্রাহিম সৈকত
এক্সিবিশনের ব্যানার

বাম থেকে বস, আমি আর নাঈম

মিতুপু, আমি আর নাঈম

গ্যালারির ভেতর গরমে হাঁসফাঁস লাগছিল। তাই চা খেতে
বের হওয়া সবাই মিলে। বাম থেকে জুম কমিক্সের ক্রিয়েটর
সব্যসাচী চাকমা, ইব্রাহীম কমিক্সের আর্টিস্ট অ্যাড্রিয়েন আর
ইব্রাহীম কমিক্সের ক্রিয়েটর তানজিম।

মেহেদী ভাই চা খায়।

অ্যাড্রিয়েন,আমি। সিধু আর সব্যসাচী

বজ্রমুষ্ঠি!
বাম থেকে অ্যাড্রিয়েন, সব্য, সিধু, হাসিব ভাই আর আমি।




লুঙ্গিম্যান কাহিনী

"তুফান নগর, মশায় মশাময়। সেই শহরের দুই মেয়র আছেন খালি ফাঁকা বুলি দিয়ে মিডিয়া কভারেজ নিতে। কাজের কাজ আর হচ্ছে না। মানুষজনের নাভিশ্বাস ওঠার দশা মশায়। নিত্যুনতুন তুঘলকী সব আইডিয়া বাতলে যাচ্ছেন দু'জনে, এমনকি চলে আসছে বেশ কিছু বিদেশী দাওয়াই। এদিকে তুফান নগরের একেবারে খাস দেশি লোকাল হিরো 'লুঙ্গিম্যান' যতই বলে যাচ্ছে যে সে চাইলে যে কোন সমস্যাকেই সমাধান করে দিতে পারে, কিন্তু তার 'ক্ষ্যাত' গেট আপের কারণে কেউ তাকে পাত্তা দিচ্ছে না, কিন্তু অদিকে দুই মেয়রের আইডিয়া এতই ভয়াবহ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন যে শেষমেশ- নাহ শেষমেশ কী হয় সেটা দেখতে ত আসলে বইটা পড়তে হবে, আর সময় কাটাতে হবে আমাদের লুঙ্গিম্যানের সাথে।"

রকমারি ডট কমে আমার কমিক্স লুঙ্গিম্যান এর প্রথম সংখ্যার কাহিনী সংক্ষেপটা এভাবেই দেওয়া আছে। লুঙ্গিম্যান কে নিয়ে আমার মাথায় প্রথম র‍্যানডম একটা ভাবনা আসে ২০১৪ তে। সে সময় প্র্যাকটিস পারপাসেই আমি একটা রাফ ক্যারেক্টার এঁকে ফেলি যার পরনে ছিল লুঙ্গি। নাম দিলাম পালোয়ান। সেটা আমার এই ব্লগের এক পোস্টে আর Pinterest অ্যাকাউন্টে পোস্ট করার সময় ক্যাপশনে পালোয়ান লিখতে গিয়েও লিখলাম না। মাথায় এলো পিন্টারেস্ট এ বিদেশিরা পোস্ট দেখে। পালোয়ান কি চিনবেনা। তার চেয়ে বরং Lungi Man লিখি। লিখে নিচে লুঙ্গি কি জিনিস সেটার একটা ছোট বিবরন দিয়ে দিলাম আর ভাবলাম বাহ একটা হিরো হয়ে গেলো দেখি। লুঙ্গি ম্যান :D
(প্রথম লুঙ্গিম্যান। এই লুঙ্গিম্যান অনেক আগেই (২০১৪ তে) Blog আর Pinterest এ পোস্ট করেছিলাম।যার কারনে গুগলে লুঙ্গি ম্যান লিখে সার্চ দিলেই এই কার্টুনটা চলে আসে।) 

এরপর পড়ালেখার ব্যস্ততার কারণে আর ক্যারেক্টারটা নিয়ে কাজ করা হয়নি। আর পড়ালেখা শেষ করার পর নতুন ক্যারিয়ার গুছানোর ব্যস্ততার কারণে পার্সোনাল কোন কাজই ধরতে গেলে করতে পারিনি। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে লুঙ্গি ব্যাপারটা আমার মাথাতে অবশ্য ছিল। যে কারনে আমি ব্যাটম্যান, ডেডপুল, মিনিয়ন, টুজকি, ঢাকা কমিক্সের ক্যারেক্টার রিশাদ কে লুঙ্গি পরিয়ে ফ্যান আর্ট করেছিলাম। :D
আর মাঝে মাঝে নিজের বেশ কিছু ক্যারেক্টারকে নিয়ে কাজ করার কথা ভেবেছি। বাবলু ভাইকে ফোর্স করে তার কাছ থেকে সাইন্স ফিকশন এর প্লট নিয়েছি, লুঙ্গিম্যান কে নিয়ে ভেবেছি, দাদু দিদিমাদের কাছে শোনা গল্প থেকে কোন কমিক্স অ্যাডাপ্ট করা যায় কিনা ভেবেছি। এরকম আরো অনেক পার্সোনাল প্রজেক্ট নিয়েই ভেবেছি। কিন্তু ঘুরেফিরে সেই একই চক্র যেটা অনেক আর্টিস্ট ফেস করেন ক্যারিয়ার লাইফে। সারভাইভ করার জন্য আর ক্যারিয়ারের জন্য ক্লায়েন্টদের হয়ে কাজ করতে করতে আর নিজের প্রজেক্ট নিয়েই কাজ করা হয়ে উঠেনা আমাদের।

২০১৭ এর শেষের দিক থেকে মাথায় আবার লুঙ্গিম্যান ভর করে কিন্তু ব্যস্ততার মাঝে হাত দেওয়া হয়নি। ২০১৮ এর শুরুতে এসে দেখলাম আমার ২০১৪ এর লুঙ্গিম্যান এর ডিজাইন দিয়ে ইন্ডিয়ান এক স্টুডিও টয় বের করে ফেলেছে আর ব্যবসা ফেঁদেছে। দেখে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। বইমেলায় যাচ্ছিলাম একদিন মেহেদী ভাইয়ের সাথে। তখন শেয়ার করলাম এই ঘটনা। শুনে মেহেদী ভাই বললেন আরে কমিক্স করে ফেলো। তখন বেশ সিরিয়াস হয়েই আসিফ ভাইয়ের সাথে আলাপ আলোচনা করে বুদ্ধিশুদ্ধি নিয়ে লুঙ্গিম্যানের ক্যারেক্টার টা দাঁড় করিয়ে ফেললাম। কি হতে পারে তার কাজ, কি হতে পারে তার সুপারপাওয়ার এসব। আর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম এইবার নিজের এই প্রজেক্ট দাঁড় করাবোই। কোন এক্সকিউজ দেখাবোনা নিজেকে। সে সিদ্ধান্তকে সিরিয়াস করার জন্য Colors FM এর তাহসীন সালমান ভাইয়ের কমিকবাজ প্রোগ্রামে লুঙ্গিম্যানের কথা বলে ফেললাম মার্চেই।
(কালারস এফ এম এর কমিকবাজ তাহসীন ভাইয়ের সাথে।
জীবনের প্রথম রেডিও শো।) 

তাহসীন ভাইও শুনে বেশ উতসাহ দিলেন। বললেন আরে করে ফেলো। দারুন হবে। শুরু করে দিলাম কাজ। ক্লায়েন্টদের কাজের ফাঁকেই ঢাকা কমিক্স স্টুডিওতে গিয়ে মেহেদী ভাইয়ের সাথে বসে বসে লুঙ্গিম্যানের অরিজিন স্টোরি, প্রথম ইস্যু এর প্লট রেডি করলাম, ক্যারেক্টার ডিজাইন করলাম বেশ কয়েক ধাপে। গল্পের ভিলেন আর অন্যান্য ক্যারেক্টারগুলির ডিজাইন, কমিক্সের পেজের রাফ করে ফেললাম। এর মাঝে বেশ কবার লুঙ্গিম্যানের ক্যারেক্টার চেঞ্জ করেছি আমি। যাই করি পছন্দ হয়না নিজের। আবার কনফিউশনও ছিল অনেক।


(লুঙ্গিম্যান চরিত্রের প্রাথমিক কিছু ডিজাইন। শেষের ডিজাইনটি ফাইনাল করেছিলাম মেহেদী ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে।)
লুঙ্গিম্যানের ফাইনাল Turn-Around শিট

পূর্ব তুফাননগরের মেয়র চিকনগুনি


পশ্চিম তুফাননগরের মেয়র মোটাগুনি

ক্যারেক্টার প্রপোরশন শিট

এর মাঝে অন্য কমিক্স নিয়ে কাজ করেছি যার কারনে লুঙ্গিম্যান এর প্রজেক্ট আবার স্থগিত রাখা হলো। এর মধ্যে চলে এলো অক্টোবর মাস। আর্টিস্টদের সেলফ চ্যালেঞ্জ ইভেন্ট Inktober এ আবার লুঙ্গি ম্যানকে নিয়ে কাজ শুরু করবো সিদ্ধান্ত নিলাম। এবং অক্টোবরের শুরু থেকেই বিভিন্ন কনসেপ্ট আর পোজ আঁকা শুরু করলাম।


Inktober #1
Inktober #2
Inktober #7

এঁকে ফেসবুকে পোস্ট করা শুরু করার পর টের পেলাম লুঙ্গি ম্যানকে অনেকে পছন্দ করছে। সরাসরি, টেক্সটে, কমেন্টে অনেকে উতসাহ দিলেন। অনেক সিনিয়র আর ফেলো আর্টিস্ট বললেন কাজটা ভাল হচ্ছে। আমার গুরু মেহেদী ভাই, আসিফ ভাই, বন্ধু অ্যাড্রিয়েন সহ অনেকের কাছ থেকে ফ্যান আর্ট পেলাম।
মেহেদী ভাইয়ের ফ্যান আর্ট 

আসিফ ভাইয়ের ফ্যান আর্ট 

আরহাম হাবিব এর ফ্যান আর্ট 

তীর্থ ভাইয়ের ফ্যান আর্ট 

দেবাদৃতা পিউ' এর ফ্যান আর্ট 

বন্ধু অ্যাড্রিয়েনের ফ্যান আর্ট 

আর আমি আরো উতসাহ পেয়ে গেলাম। যে কনফিউশনটা ছিল সেটা দূর হয়ে গেলো আমার। সবচেয়ে বেশি উতসাহ পেলাম বাতিঘরে অনুষ্ঠিত হওয়া Dhaka Comics এর প্রথম আড্ডায়। লুঙ্গি ম্যানকে নিয়ে যখন কথা বলছিলাম তখন সরাসরিই ঢাকা কমিক্সের পাঠকদের রেসপন্স পেলাম। কথা দিয়ে আসলাম সবার সামনে। এর মাঝে লুঙ্গিম্যানকে নিয়ে হালকা পাতলা জটিলতাও হলো! বস আহসান হাবিব এর হস্তক্ষেপে সে জটিলতার সমাধান শেষে আর কোন বাধা রইলোনা। এরপর টানা দুই তিন মাস কাজ করে লুঙ্গিম্যানের প্রথম ইস্যুর কাজ শেষ করলাম ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে। আর সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঢাকা কমিক্স এহেকে লুঙ্গিম্যান পাবলিশ হলো ১৫ তারিখে।
বস মনে কিছু একটা বলেছিলেন। সবাই কেলাচ্ছিলাম খুব।
ফেব্রুয়ারির ১৭ তারিখে বস আহসান হাবীব, মেহেদী ভাই, আসিফ ভাই, সব্যসাচী সহ আরো অনেকের উপস্থিতিতে ঢাকা কমিক্সের স্টলের সামনে লুঙ্গিম্যান প্রথম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হলো। মনে রাখার মতো একটা ঘটনা এটা আমার জীবনে। বইমেলার মাঝেই লুঙ্গিম্যান ফ্যান আর্ট প্রতিযোগিতা হয়েছিল। ওইদিনই বিকেলে ফ্যান আর্ট প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার হিসেবে কমিক্সের কপি আর লুঙ্গি, গামছা উপহার দেওয়া হলো। :D
বাম থেকে মেহেদী ভাই, দ্বিতীয় প্রতিযোগী সর্নাব, আমি, প্রথম প্রতিযোগী আপন আর তৃতীয় প্রতিযোগী সিফাত।

সব মিলিয়ে বেশ ভালই সাড়া পেয়েছি রিডারদের কাছ থেকে। স্টোরিটেলিংয়ে গড়বর ছিল আমার। প্রথম ইস্যুতে লুঙ্গিম্যান এর উপস্থিতি কম ছিল বলে অনেকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি যার কারনে নেক্সট ইস্যুর স্টোরির জন্য অনেক ভেবেছি আর সময় দিয়েছি। এই মুহূর্তে কাজ চলছে লুঙ্গিম্যান এর দ্বিতীয় ইস্যুর। আশা করি আগের চাইতে ভাল কাজ করতে পারবো।

বইমেলার সময় অনিক ভাই এসে একটা ইন্টার্ভিউও নিয়েছিলেন আমার। বাই দ্যা উয়ে অনিক ভাইয়ের একটা স্ক্রিপ্টেও দেশি বেশ কয়েকজন সুপারহিরো ছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিল লুঙ্গিম্যান। :D



ইন্টার্ভিউটি দেখতে চাইলে ক্লিক করুন এই লিংকে আর লুঙ্গিম্যান এর প্রথম ইস্যু কিনতে চাইলে ক্লিক করুন এই লিংকে। 

Monday, June 17, 2019

বিগিনার কার্টুনিস্ট/ইলাস্ট্রেটরদের জন্য মেনস্ট্রিম প্রিন্ট মিডিয়ায় যাত্রাঃ ০৩

মাঝেমাঝে ইয়াং কার্টুনিস্ট আর আর্টিস্টদের কাছ থেকে আমাদের প্রশ্ন শুনতে হয়, "ভাই কিভাবে অমুক পত্রিকায় আঁকবো, বা অমুক ম্যাগাজিনে আঁকার উপায় কি? বা কিভাবে বইয়ের কাজ করবো? তাদের এই 'কিভাবে' এর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমি আমার এই ব্লগপোস্ট সিরিজে।
কেন আর্টিস্ট আর কার্টুনিস্টদের অনলাইন মিডিয়ার পাশাপাশি প্রিন্ট মিডিয়ায় আসা দরকার
আর
তা নিয়ে এই পোস্ট এর সাথে রিলেটেড আরো দুটি বড় বড় পোস্ট (আসলেই বিশাল বিশাল পোস্ট এই দুইটা) আছে। কেউ আগ্রহী হলে উপরের লিংকগুলিতে ক্লিক করে পড়ে দেখতে পারেন লেখাগুলি। আর কেউ পড়তে না চাইলে অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন বলে পড়ে ফেলেন এই পোস্ট। :D

প্রথম কাজঃ আঁকুন

আপনি যেহেতু এই পোস্ট পড়ছেন সেহেতু আমি ধরে নেব আপনি একজন আঁকিয়ে এবং পত্রিকায় বা কোন পাব্লিকেশনের জন্য কাজ করতে চাচ্ছেন। এবং আপনার জন্য খুশির সংবাদ হচ্ছে পত্রিকা এবং পাব্লিকেশনরাও আপনাকে খুঁজছে। তবে এখানে একটা কিন্তু আছে। কিন্তুটা হচ্ছে আপনার কাজ ভাল হতে হবে। আপনি আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন "কত ভালো?" আমার উত্তর হবে, ভালোর আসলে শেষ নাই। এখন আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট ম্যাগাজিন, পত্রিকার ফিচার অথবা বইয়ের ইলাস্ট্রেশন করতে চান তবে সেই ম্যাগাজিন বা পত্রিকার কাজগুলি ফলো করুন। দেখুন তারা কি ধরনের কাজ ছাপায়। কোন কোন আর্টিস্ট এর কাজ ছাপায়। সে আর্টিস্টদের কাজ ফলো করুন। আপনার কাজের মান তাদের কাজের তুলনায় কেমন সেটা দেখুন। যদি দেখেন আপনার কাজ তাদের তুলনায় ভাল না তবে নিজের আঁকা উন্নত করুন। তাদের মত হতে না পারলেও তাদের কাজের আশেপাশে নিজের কাজের কোয়ালিটি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। কমিক্স আঁকার ইচ্ছা থাকলে কমিক্স পড়ুন, দেখুন, আঁকুন। কার্টুন বা ইলাস্ট্রেশন যা ই করতে চান তা ই টার্গেট করে লেগে থাকুন।

আর আঁকা উন্নত করতে চাইলে প্র্যাকটিসের বিকল্প নাই। এখানে একটা কথা আছে। শুধুমাত্র আঁকলেই হবেনা। যা আঁকছেন তা জেনে বুঝে আঁকতে হবে। কোন লাইন মোটা হচ্ছে কেন বা চিকন হচ্ছে কেন, কাপড়ের ভাজটা এখানে না হয়ে ওখানে হলো কেন এসব মাথায় রেখে জেনে বুঝে প্র্যাকটিস করলে ভাল ফল পাবেন। আর আঁকার ক্ষেত্রে ট্র্যাডিশনাল মিডিয়ামে আঁকলেন নাকি ডিজিটাল মিডিয়ামে আঁকলেন সেটা বড় কথা না। আঁকতে জানলে যে কোন মিডিয়ামেই আঁকতে পারবেন। না জানলে ওয়াকমের লাখ টাকা দামের পেন ডিসপ্লে ধরিয়ে দিলেও আপনি আঁকতে পারবেন না।


প্রতিদিন নিজের সাথে প্রতিযোগিতা করুন। আজকে যে কাজটা করলেন কালকের কাজটা যাতে তার চেয়ে ভাল হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। আজকে আঁকাআঁকি শুরু করে কালকেই যদি মনে করেন আপনার কাজ ছাপা হওয়ার যোগ্য তবে আপনার ধারনা ভুল। প্রিন্ট মিডিয়া আর সোশ্যাল মিডিয়া আলাদা ব্যাপার। ফেসবুকে আপনার যা খুশি এঁকে পোস্ট করতে পারবেন কিন্তু প্রিন্ট মিডিয়ায় এক একটা কাজ কয়েকবার চেক হয় ছাপা হওয়ার আগে। তাই কাজ ভাল করার চেষ্টা করুন।

দ্বিতীয় কাজঃ দেখান
আঁকার পর আপনার কাজ হবে দেখানো। দেখানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার চেয়ে ভাল কিছু আর নাই। কোন কার্টুন, কমিক্স স্ট্রিপ, ইলাস্ট্রেশন করার পর ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে, পেইজে অথবা বিভিন্ন আর্ট গ্রুপে শেয়ার করেন। আর্ট গ্রুপের সিনিয়র দের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিন। নিজে চেয়ে চেয়ে ভুল ত্রুটি দেখিয়ে দিতে বলুন। কারন আপনার প্রোফাইলে শেয়ার করা ছবিতে কেউ আপনার ভুল ধরবেনা। সবাই আপনার বন্ধু তাই তারা প্রশংসাই করবে। বলবে "আরে জোশ"। এই জোশ দেখে হুঁশ হারালেন তো সর্বনাশ! মনে রাখবেন আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে আপনার পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট থাকতে পারে। তাই ফেসবুকে পোস্ট করার জন্য তাড়াহুড়া করে কাজ শেষ করবেন না। সময় নিয়ে নিজের সেরাটা দিয়ে কাজ করুন। এরপর পোস্ট করুন। ট্র্যাডিশনাল মিডিয়ামে কাজ করলে স্ক্যান করে পোস্ট করার চেষ্টা করুন।
বিঃদ্রঃ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার পর কাওকে নিজের কাজ বা পেইজ লাইক করতে বলবেন না। এতে বাকি সব সস্তা ফেমসিকারদের মধ্যে পড়ে যাবেন নিজে। আর নিজের পেইজ/কাজ লাইক করতে বলাটা একটু সস্তা দেখায়। আপনার কাজ ভাল হলে কাওকে বলতে হবে না। লোকজন নিজেরাই লাইক দেবে।

তৃতীয় কাজঃ পোর্টফলিও বানান
এই কাজটা ইম্পরট্যান্ট। মনে করেন আপনার কাছে এখন অনেক স্যাম্পল কাজ আছে কোন পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টকে বা এডিটরকে দেখানোর জন্য। অথবা কেউ কাজ দেওয়ার জন্য ইন্টেরেস্টেড হয়ে আপনার কাজ দেখতে চাইলো। তাহলে কিভাবে দেখাবেন?
ফেসবুকের একটা গুছানো পেইজ বা ইন্সটাগ্রামের একটা প্রোফাইলে নিজের কাজগুলি গুছিয়ে রাখা যেতে পারে যেটা দেখানো যায় চট করে। তবে সবচেয়ে ভাল হয় যদি কোন পোর্টফলিও সাইট থাকে। কেউ কাজ দেখতে চাইলেই চট করে সাইটের লিঙ্ক দিয়ে দিলেন। এটা থেকে বুঝা যাবে আপনি প্রফেশনাল কেউ। ফ্রিতেই সহজে পোর্টফলিও বানিয়ে নেওয়ার অনেক অপশন আছে। যেমন Artstation, Tumblr, Blogspot, Wordrpress ইত্যাদি। এখানের কোন সাইটে একটা গুছানো পোর্টফলিও বানিয়ে নিন।


চতুর্থ কাজঃ নেটওয়ার্কিং
বল্টু পল্টু চুমকিদের সোশ্যাল মিডিয়ার ফ্রেন্ডলিস্টে রাখার পাশাপাশি প্রফেশনাল ফিল্ডের লোকদেরও ফ্রেন্ডলিস্টে রাখার চেষ্টা করুন। বিভিন্ন ম্যাগাজিনের এডিটর,পত্রিকার এডিটর, আর্টিস্টদের কে ফ্রেন্ডলিস্টে রাখুন। বিভিন্ন আর্ট গ্রুপে থাকুন এবং নিজের কাজ পোস্ট করুন। এইসব আর্ট গ্রুপে বিভিন্ন পত্রিকা বা এজেন্সির ক্রিয়েটিভরা থাকেন। তাদের চোখে আপনার কাজ পড়বে। সমসাময়িক আর্টিস্টদের সাথে যোগাযোগ রাখুন আর সিনিয়রদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। তাদের মাধ্যমেও অনেক সময় হাতে কাজ আসে। বেশি ভাল হয় যদি এই ফিল্ডে প্রতিষ্ঠিত কাওকে গুরু ধরেন। আঁকাআঁকি আসলে গুরুমুখি বিদ্যা। তবে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন, শিখতে গিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে কাওকে বেশি বিরক্ত করবেন না বা ফেসবুকে নকের পর নক দেবেন না। প্রফেশনাল রা প্রায় সময়ই ব্যস্ত থাকে তাই তারা বিরক্ত হওয়া পছন্দ করেন না। যখন আপনার মনে হবে আপনার আঁকা কোথাও ছাপা হওয়ার মতো একটা পর্যায়ে আছে তখন প্রফেশনালদের দেখান। বিভিন্ন পত্রিকার ফিচার এডিটরদের, আর্টিস্টদের মেইল করতে পারেন। জানিয়ে রাখতে পারেন আপনি তাদের জন্য কাজ করতে পারবেন। কারো আপনার কাজ পছন্দ হলে কাজ পেয়ে যাবেন। নেটওয়ার্কিং স্কিল খুবি গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার।


পঞ্চম কাজঃ ছাপা হওয়া
কেউ যখন ইন্টেরেস্টেড হয়ে আপনার কাজ ছাপাতে চাইবে তখন কাজের সাইজ, ডেডলাইন, কাজের বিল এসব ব্যাপারে কথাবার্তা বলে রাজি হলে কাজ করে ফেলুন। নিউজপ্রিন্টের জন্য কাজ করার সময় রঙের ব্যাপারে সাবধান থাকুন। খুব বেশি গাড় রঙ এড়িয়ে যাওয়াই ভাল কারন নিউজপ্রিন্টে গাড় রঙ মার খেয়ে যায়। ইলাস্ট্রেশনের সাইজ ছোট হলে আঁকা সিম্পল রাখাই ভাল। আর কাজ করতে করতে একসময় নিজেই বুঝে যাবেন কোন কালারে কিভাবে কাজ করলে ভাল আসবে প্রিন্ট। ছাপার অক্ষরে নিজের কাজের পাশে নিজের নাম দেখতে পাওয়াটার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। ট্রাই করে দেখুন। আমার কথা সত্য কিনা। মিথ্যা হলে চা খাওয়াবো। :D
বিঃদ্রঃ সাধারনত দৈনিক পত্রিকার ফিচার বা মাসিক ম্যাগাজিন গুলির কাজ করার জন্য সময় কম পাওয়া যায়। এমনও হতে পারে পাতা পাবলিশ হওয়ার আগের দিন আপনাকে কাজ ধরিয়ে দিতে পারে কোন এডিটর। এই ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে।

কিছু এক্সট্রা উপদেশ
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার জমানা। লেখক কবি শিল্পী সবার নিজস্ব প্রতিভা সহজে শেয়ার করা যায় সোশ্যাল মিডিয়াতে। এখানে একটু সাবধান হতে হবে। কার্টুনিস্ট মিতু আপুর ভাষায়, "সোশ্যাল মিডিয়াতে ফেইম সিকিং এর ট্র্যাপে পড়াকে সচেতনভাবে এভয়েড করতে হবে।" আপনি নিজের জন্য কাজ করছেন। সে কাজ সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করছেন সেটা ঠিক আছে। কিন্তু যখনই আপনি পাবলিক ডিমান্ড বুঝে আঁকতে যাবেন তখনই আপনি আপনার স্বকীয়তা হারাতে শুরু করবেন। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিটি লাইক, কমেন্ট, শেয়ার আমাদের মস্তিষ্কের ডোপামিনে কিক দেয়। প্রতিটি রেসপন্সে আমরা খুশি হই।
আপনাকে এই লুপ থেকে বের হতে হবে। নিজের একটা সতন্ত্র আঁকার স্টাইল থাকবে। সেই স্টাইলে আঁকবেন ইচ্ছেমতো। কিন্তু যখন কারো জন্য আঁকতে যাবেন তখন হয়তোবা আপনাকে অন্যান্য স্টাইলও ফলো করতে হবে। যেমন ধরেন আপনার আঁকার ধরন খুবি রাফলি কার্টুনিশ। সে আঁকা দিয়েই আপনার ফেসবুক পেইজে হাজার হাজার লাইক কমেন্টের বন্যায় ভাসছেন। ভাল কথা। কিন্তু মনে রাখবেন এই লাইক কমেন্ট রেসপন্স ক্ষণিকের। সোশ্যাল মিডিয়ায় এতো দ্রুতই ট্রেন্ড চেঞ্জ হয় আপনার পোস্ট এর স্থায়িত্ব অল্প কদিনের। প্রিন্ট মিডিয়ার(বই, ফিচার, ম্যাগাজিন) জন্য যখন আঁকতে যাবেন তখন হয়তো দেখা যাবে আপনার রাফ স্টাইল চলছেনা। তাই বিভিন্ন স্টাইল আয়ত্ব করার চেষ্টা করুন যে স্টাইলগুলি ফিল্ডে চালু আছে। আর নিজের প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করুন। নিজের গল্প, গল্পের ক্যারেক্টার তৈরি করার চেষ্টা করুন। যে গল্প, ক্যারেক্টার সম্পূর্ণই আপনার নিজের। সে গল্প পাবলিশ করার চেষ্টা করুন কোন ম্যাগাজিন বা পাব্লিকেশন থেকে। দিনশেষে এই পাব্লিকেশনই থাকবে আপনার বুক শেলফে।


অনেক বকবক করে ফেললাম এক পোস্টেই। আজ এ পর্যন্তই। কারো মতামত বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। আমি নিয়মিত প্রিয় শিল্পীদের ব্লগপোস্ট পড়ি, Podcast আর Art-Talk শুনে থাকি কাজ করার সময়। এই লেখা লেখার সময় যে ব্লগপোস্ট আর আর্ট-টক গুলি হেল্প করেছে সেগুলির লিঙ্ক দিয়ে দিলাম;
ড্রয়িং ভাল করতে হবে-মানে কী? - আসিফুর রহমান
কার্টুনিস্ট ও আঁকিয়েদের জন্য ক্যারিয়ার টিপস্‌ - মেহেদী হক
Networking for Artists - 3 point perspective Podcast
My art is great, Why won't anyone hire me - 3point perspective Podcast

Sunday, June 16, 2019

বিগিনার কার্টুনিস্ট/ইলাস্ট্রেটরদের জন্য মেনস্ট্রিম প্রিন্ট মিডিয়ায় যাত্রাঃ ০২

এর সিরিজের আগের পোস্টে লিখেছিলাম আঁকাআঁকি নিয়ে আমার মেনস্ট্রিম মিডিয়ার যাত্রার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে। এই পোস্টে আমার প্রিয় কয়েকজন বাংলাদেশি আর্টিস্টদের প্রিন্ট মিডিয়ায় যাত্রা নিয়ে অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যাক।

নাসরীন সুলতানা মিতুঃ বাংলাদেশের প্রথম সারির কার্টুনিস্টদের মধ্যে একজন মিতু আপু। অ্যাসোসিয়েট এডিটর হিসেবে কাজ করছেন উন্মাদ ম্যাগাজিনে। বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা প্রজেক্ট টিকটালিকের ফাউন্ডার। মিতু আপুর সাথে কথায় জানতে পারি তিনি প্রথম কাজ শুরু করেন উন্মাদ ম্যাগাজিনে কিন্তু প্রথম আঁকা কার্টুন ছাপা হয় বিচিত্রা ম্যাগাজিনে ২০০৬ সালে। কাজটা ছিল একটা পলিটিকাল কার্টুন। উন্মাদে কাজ করতে করতেই কার্টুনিংয়ে হাত পাকাতে থাকেন নিয়মিত আঁকার মাধ্যমে। নিয়মিত পলিটিকাল কার্টুন আঁকা শুরু করেছিলেন ২০১০ সালে নিউ এইজ পত্রিকায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়য়ে অধ্যাপনা করার পাশাপাশি নিয়মিত কার্টুন এঁকেছেন আর কমিক্স এঁকেছেন ঢাকা কমিক্সে। কাজ করেছেন বিভিন্ন প্রকাশনীর বইয়ের জন্য আর নিজের বইয়ের জন্য। এখন অধ্যাপনার পাট গুছিয়ে পুরদস্তুর আঁকিয়ে তিনি। ব্যস্ত আছেন প্রজেক্ট টিকটালিক নিয়ে।


যারা নতুন আঁকছে/ছেন তাদের উদ্দেশ্যে মিতু আপু বলেন;

"আঁকা, আঁকা এবং আঁকা। এবং সোশ্যাল মিডিয়ার উপস্থিতি দোষনীয় না, কিন্তু সহজ ফেইম সিকিং এর ট্র্যাপে পড়াকে সচেতনভাবে এভয়েড করা। আর লাস্ট একটা কথা, গত কয়দিন ধরে মনে হচ্ছে-

ড্রইং যারা করে পছন্দ করে বলেই করে, অনেকেই অনেক দারুণ দারুণ কাজ করছে এখন। কিন্তু ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চাইলে ভিশন থাকা জরুরি। যেমন তুমি ফ্রিল্যান্সিং করছ, তোমার আলটিমেট গোল কী? তোমার লাইফে নিজের কোন কাজটা তোমার ফারদার ক্যারিয়ারকে একটা জায়গায় দাঁড় করাবে? সেরকম কিছু প্ল্যান না থাকলে একটা সময়ে ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে যাবার চান্স থাকে। আইডেন্টিটি ক্রাইসিস শুরু হয়। ভাল ড্রইং এর পাশাপাশি ক্যারিয়ার পাথওয়ে থাকাটাও জরুরি।

আসিফুর রহমানঃ ২০১২-১৩ তে যখন আমি আঁকাআঁকি শুরু করি তখন ফেসবুকে মেহেদী ভাই শুভ ভাইদের কাজের পাশাপাশি আরেকজন মানুষের কাজ ফলো করতাম । মানুষটি হলেন Arts By rats এর আসিফ ভাই। বুয়েট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পাশ করা আসিফ ভাই নেশা থেকে আঁকাআঁকিকে পেশা হিসেবেই নিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে কনসেপ্ট আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন মাইটি পাঞ্চ স্টুডিওতে, ফ্রিল্যান্স কমিক বুক আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন ঢাকা কমিক্স আর পাঞ্জেরীতে। আঁকতে ভালবাসেন চিলড্রেন বুক। নিজের কমিক্স ক্যারেক্টার "জিতু আর টি" এর কমিক্স স্ট্রিপ আর বই আর অন্যান্য অনেক কমিক্সের পাশাপাশি কাজ করেছেন বেশ কিছু চিলড্রেন বুকে। বিভিন্ন স্টাইলে আঁকতে দেখা যায় আসিফ ভাইকে এবং সময়ের সাথে সাথে নিজের আঁকাকে উন্নত করছেন। আমার কাছে বর্তমানে বাংলাদেশের টপ আর্টিস্টদের মধ্যে একজন হচ্ছেন আসিফ ভাই। এই ব্লগপোস্ট লেখার জন্য আসিফ ভাইয়ের কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম কিভাবে উনি প্রথম মেনস্ট্রিম প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করার জন্য ডাক পেলেন।




আমার করা প্রশ্ন আর উনার উত্তরগুলি হুবহু তুলে দেওয়া হলো;
আপনি প্রথম কোন প্রিন্ট মিডিয়ায় (পেপার/ম্যাগাজিনে) কাজ কিভাবে পাইসিলেন?
- প্রথম পেপার/ ম্যাগাজিনে কাজ সম্ভবত রস-আলো তে। ফেসবুকের কাজ দেখে এডিটর কাজ চেয়েছিলেন। রুশ রস নাম এ একটা ফিচারে ইলাস্ট্রেশান এর জন্য।
প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ পাওয়ার আগে কয় বছর ধরে নিয়মিত একটু সিরিয়াসলি আঁকাআঁকি করছেন ?
- ২-৩ বছর। আঁকা আঁকি শুরুর দিকে ফেসবুকে ব্লগে ইত্যাদি জায়গায় নিয়মিত প্র্যাকটিস, স্কেচ, ড্রয়িং এগুলো পোস্ট হত-ক্রিটিক হত।
কখন প্রথম কোন বইয়ের কাজ করসিলেন? কিভাবে পাইসিলেন বইয়ের কাজ?
- প্রথম বই এর কাজ মাশুদুল হক এর “রাজকুমার বিলু কালু গিলু এর অভিযান”। বই এর কাজ এর জন্য নক করেছিল মাশুদুল হক। পরে প্রকাশক এর সাথে যেয়ে দেখা করে কাজ দেখাই এবং তারপর কাজটা করা হয়। সম্ভবত ২০১৩ এর ফেব্রুয়ারি মেলাতে বইটা এসেছিল।

রীশাম শাহাব তীর্থঃ পেশায় স্থপতি তীর্থ ভাই আমার খুবি পছন্দের একজন আর্টিস্ট এবং দারুন একজন আঁকিয়ে। উনার কাজগুলি জাস্ট অসাধারণ। উনার দৈনন্দিন জীবন নিয়ে আঁকা "যাপিত জীবন" সিরিজের ছবিগুলি যে আমার কি ভাল্লাগে!


তীর্থ ভাইয়ের সাথে কথায় কথায় জানতে পারি প্রিন্ট মিডিয়ায় উনার প্রথম কাজের অভিজ্ঞতা হয় ক্রীড়ালোক নামে একটা পত্রিকায় ৯৫-৯৬ এর দিকে। তার পরিচিত একজন ছিল সেখানে। তিনিই কাজ দিতেন। এর পর Weekend Tribune এ কাজ করেন ২০১৮ তে এসে। এর আগে থেকে সিরিয়াসলি আঁকাআঁকি করছেন ২০১৬ থেকে। ফেসবুকে Tirtho নামের পেইজটি ঘুরে দেখতে পারেন যদি তীর্থ ভাইয়ের কাজ আগে না দেখে থাকেন। দারুন সব কাজ করে যাচ্ছেন আর উনার অনেক কাজ বাইরের অনেক ওয়েবসাইট আর পপুলার পেইজেও ফিচার্ড হয়েছিল। এখনো নামে বেনামে ফিচার হতে দেখি। :D । স্থাপত্যের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্স আঁকাআঁকি করছেন দেশের প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের মতো পত্রিকাগুলোতে আর কিশোর আলো, কিশোর বাংলার মতো পপুলার ম্যাগাজিনগুলিতে। তীর্থ ভাই প্রথম বইয়ের কাজ করেন ৯৯ সালে। এরপর ২০১৬ তে সিরিয়াসলি আঁকাআঁকি শুরু করার পর থেক কাজ করেছেন বেশ কিছু বইয়ের কভার আর ইলাস্ট্রেশনের জন্য। ২০১৯ এর একুশে বইমেলাতেই চিলড্রেনবুক আর বই মিলিয়ে করেছেন মোট চারটা বইয়ের কাজ। সোশ্যাল মিডিয়া প্রিন্ট মিডিয়া দুই দিকই কাঁপাচ্ছেন এই দারুন মানুষটি।

নাঈম আহমেদঃ



(নাঈমের এই ছবিটা তীর্থ ভাইয়ের আঁকা।)

এই মানুষটা ভয়ানক ভাল আঁকে। নাঈম এর পড়ালেখা ছিল আর্কিটেকচার নিয়ে SUST এ। ক্লাস সেভেন-এইটে পড়ার সময় থেকেই সে আঁকাআঁকি শুরু করে। নাঈমের প্রথম প্রিন্ট মিডিয়ার অভিজ্ঞতা উন্মাদ ম্যাগাজিনে। নিজের আঁকা নিয়ে এক বন্ধুর সাথে বস আহসান হাবিবের কাছে গিয়েছিল সে। সে থেকেই শুরু। কাজ করেছে উন্মাদে অনেক বছর। আর এ পর্যন্ত ১৪-১৫ টা বইয়ের কাজ করেছে নাঈম।

হাসিব কামাল: হাসিখুশি মানুষ হাসিব ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় আড্ডা বেশিদিনের নয়। গত এক দুই বছর বড়জোর! এর মধ্যেই এই মানুষটা আমার প্রিয় একজন হয়ে উঠেছেন। দুজনে মিলে একই প্রতিষ্ঠানের জন্য আর একই প্রজেক্টে কাজ করা হয়েছে বেশ কয়েকবার।


হাসিব ভাইকে আঁকতে দেখছি অনেক বছর ধরেই। কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করা মানুষটা এখন পুরোপুরিই পেশাদার ইলাস্ট্রেটর। উন্মাদ ম্যাগাজিনে আছেন অনেকদিন ধরেই। নিয়মিত আঁকছেন আর নিজের আঁকাকে উন্নত করছেন। বেশ কিছু কমিক্স আর গ্রাফিক্স নভেলের পাশাপাশি ২০১৮ এর বইমেলায় প্রকাশ করেছেন নিজের কমিক্স "বোবা আর্তনাদ"। কাজ করছেন দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা আর মাসিক ম্যাগাজিনে। প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রথম কাজ ছিল "রস আলো" তে আর প্রথম বইয়ের কাজ করেন ২০১৪/১৫ তে। বইটা ছিলো 'সৈয়দ শামসুল হকে'র! কাজটা পেয়েছিলেন এক প্রকাশক বড়ভাইয়ের মাধ্যমে।
নতুনদের উদ্দেশ্য হাসিব কামাল বললেন - প্রচুর প্র‍্যাকটিস করো আর শেখার প্রসেসটা এনজয় করার চেস্টা করো। ইন্সপিরেশান আর আইডিয়ার জন্য নিজের চারপাশের পরিবেশ আর ক্যারেক্টারগুলোকে নিখুতভাবে পর্যবেক্ষণ করো। নিজের আকা নিয়ে কখনোই ওভার কনফিডেন্ট হয়োনা, কারণ এটা তোমাকে নতুন কিছু শেখার আগ্রহকে কমিয়ে দিতে পারে।

প্রসূন হালদার:


প্রসূন হালদার এর আঁকা সম্পর্কে কিছু আর বললাম না আমি। দারুন আঁকাআঁকির জন্য অনেকেই চেনেন প্রসূনকে। সে পড়াশোনা করছে ঢাবি চারুকলায়। জলরঙের জাদুকর প্রসূন পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করছে প্রিন্ট মিডিয়ায়। কাজ করেছে কিশোর আলো, বিচ্ছু(যুগান্তর) সহ বিভিন্ন ম্যাগাজিনে। তার কাছ থেকে নেওয়া ছোট ইন্টার্ভিউ তোলে দিলাম;

১) তুমি প্রথম কোন প্রিন্ট মিডিয়ায় (পেপার/ম্যাগাজিনে) কাজ কিভাবে পাইসিলা?
- চারুকলায় ভর্তি হবার কিছুদিন পর। ফেসবুকে আমার কাজ দেখে নক দিয়েছিলো।
২) প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ পাওয়ার আগে কয় বছর ধরে নিয়মিত একটু সিরিয়াসলি আঁকাআঁকি করতেসো ?
- ৬ মাস। মূলত চারুকলায় চান্স পাবার পরই সিরিয়াসলি আঁকা আঁকি শুরু করি।
৩) কখন প্রথম বইয়ের কাজ করসো ? কিভাবে পাইসো বইয়ের কাজ?
- চারুকলায় ভর্তির আগে এস এস সি পড়ার সময় আমার বন্ধুর খালার প্রকাশনীতে কিছু কাজ করেছি বইয়ের, তবে তার মান বেশি ভাল করতে পারিনি, এর পরে আবার বইয়ে কাজ করি চারুকলায় ভর্তির প্রায় এক বছর পরে। বইয়ের নাম আমি বলতে পারবো না, আমি শুধু জলরঙে প্রচ্ছদের ছবিটা এঁকে দিয়েছিলাম।

সব্যসাচী চাকমাঃ ঢাকা কমিক্স থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় 'জুম' কমিক্স সিরিজের স্রষ্টা সব্যসাচী চাকমার আঁকাআকি শুরু ছোটবেলা থেকেই। তার সাথে কথা বলে জানা যায় সে ক্লাস থ্রি তে পড়ার সময় থেকেই কার্টুন কমিক্স এসব আঁকাআঁকি করছে। হাই স্কুলে পড়ার সময়ও নিয়মিত আঁকতো সে। প্রথম প্রিন্ট মিডিয়ার কাজ ছিল উন্মাদ ম্যাগাজিনে। ২০১৬ সালের দিকে তার এক ফ্রেন্ড উন্মাদে সব্যর কাজ পোস্ট করে। পরে সে নিজেই বস আহসান হাবিব কে মেইল করলে বস তাকে দেখা করতে বলেন। এভাবেই উন্মাদে তার যাত্রা শুরু হয়. আর রস+আলো এর এডিটর রনি ভাইয়ের সাথে সে নিজেই যোগাযোগ করে একটা কাজ পাঠায় আর বলে সে রস আলোতে কাজ করতে আগ্রহী। আঁকা দেখে রনি ভাই সেটা রসআলোতে ছেপে দেন। এরপর থেকে সে এঁকেছে রস+আলোতে আর বর্তমানে প্রথম আলো এর বিভিন্ন ফিচারে আঁকছে সে।


জুম ক্যারেক্টার আর গল্প ডেভেলপ করার পর ২০১৬ সালেই প্রথম জুম কমিক্সের ব্যাপারে সে কথা বলে ঢাকা কমিক্সের প্রকাশক মেহেদী ভাইয়ের সাথে। পুরো কমিক্সটাই সে এঁকেছিল ট্রাডিশনাল মিডিয়ামে কালি কলমে। পড়ালেখার ব্যস্ততার কারনে কমিক্সের কাজ অনেকদিন বন্ধ ছিল। পরে মেহেদী ভাইয়ের সাজেশনে কিছু পেইজ এডিট করে আবার দেখায় সে মেহেদী ভাইকে। ২০১৮ এর বইমেলায় 'জুম' এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশ পায় ঢাকা কমিক্স থেকে। এবং জনপ্রিয়তা পায় বাংলাদেশি কমিক্স রিডারদের মধ্যে। সেই জনপ্রিয়তার জের ধরে ২০১৯ এর বইমেলায় প্রকাশ পায় জুম এর দ্বিতীয় সংখ্যা।
নতুনদের উদ্দেশ্যে সব্যসাচীর মেসেজ;
আপনার কাছে কি গ্রাফিক ট্যাবলেট আছে? যদি থাকে, তাহলে ওয়াও! আপনি লিওনার্দো ডি ভিঞ্চির উত্তরসূরি। এটাই ভাবেন অনেকেই। হয়তো তারা এটাও ভাবেন, যে ডি ভিঞ্চি গ্রাফিক ট্যাব দিয়ে 'মোনালিসা' এঁকেছিলেন। গ্রাফিক ট্যাব থাকা মানেই আপনি অনেক বড় আর্টিস্ট। কিন্তু কথা হচ্ছে ভাই, আপনাকে ট্যাব কেন; যদি ডি ভিঞ্চির পেন্সিলও এনে দেয়া হয়, তাও কিন্তু আপনি ডি ভিঞ্চি হতে পারবেন না। তাই বলছি, ভাল আর্টিস্ট হতে ট্যাব লাগে না। লাগে ইচ্ছা, প্যাশন। আর আর্টিস্ট হতে ৮০০ টাকা খরচ করে স্কেচবুক কিনা লাগে না। মাত্র ১০ টাকার খাতা, আর ৫ টাকার কলম কিনেই কিন্তু স্কেচবুকিং করা যায়। আদিম যুগের মানুষরা কত কষ্টেই না ছিল। বেচারাদের স্কেচবুক ছিল না। তাই রাগে-দুঃখে গুহার দেয়ালে ছবি এঁকেছিল। আসলে কিছুই না, ইচ্ছা থাকলেই হয়। ৮০০ টাকা দিয়ে স্কেচবুক কিনতে না পেরে, আঁকাআঁকি করতে না পারাটা অজুহাত ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই ভাই, যা আছে তা দিয়েই আঁকেন। কথা কম, কাজ বেশি।

মাহাতাব রশীদঃ মাহাতাব সম্পর্কে এক বাক্যে বলতে গেলে বলা যায় "সে একটা জিনিস।" এই বছর HSC পরীক্ষা দেওয়া মাহাতাবের ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকি করা অভ্যাস। কিশোর আলো তে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করত সে। যার কারনে পরিচিত অনেকেই জানতো সে আঁকাআঁকি করে। মাহাতাব সিরিয়াসলি আঁকাআঁকি শুরু করে ২০১৪ সাল থেকে। মাহাতাবের প্রিন্ট মিডিয়ায় যাত্রা শুরু ২০১৫ তে রস+আলো তে আঁকার মাধ্যমে। সিরিয়াসলি আঁকাআঁকি শুরু করার আনুমানিক দেড় বছর পর। ততদিনে তার আঁকার হাত মোটামুটি ভাল হয়েছে।



এরপর তার আঁকা হয়েছে যুগান্তর পত্রিকার বিচ্ছুর জন্য, কিশোর আলোর জন্য, বিজ্ঞান চিন্তার জন্য। ২০১৮ এর প্রথম দিক থেকে শুরু করা এবং ফেসবুকে দারুন জনপ্রিয় মাহাতাবের "মাহাকাব্য" ওয়েবকমিক্স প্রথম আলো এর ফিচার "রস আলো" তে নিয়মিত প্রকাশ হওয়ার পর এখন প্রকাশিত হচ্ছে ছুটির দিনে তে। মাহাতাব বইয়ের কাজ প্রথম করেছিল ২০১৫ তে। লেখকের সাথে ফেসবুকে পরিচয় ছিল। আর সে নিয়মিতই তার আঁকা আপলোড করতো। ওখান থেকে দেখেই তাকে নক দিয়েছিলেন লেখক। সে থেকে শুরু। বেশ কিছু বইয়ের ইলাস্ট্রেশন আর কভার করেছে মাহাতাব। ঢাকা কমিক্স আর কিশোর আলো এর জন্য করেছে কমিক্স। সর্বশেষ এই বইমেলায় HSC পরীক্ষার ব্যস্ততা সত্বেও করেছে বস আহসান হাবীব এর চিলড্রেন বুক "গোয়েন্দা আঙ্কেল" এর জন্য দারুন সব ইলাস্ট্রেশন। আবারো বলছি আমার খুবি পছন্দের একজন আর্টিস্ট মাহাতাব একটা জিনিস!

সালমান সাকিব শাহরিয়ারঃ মাহাতাবের মতোই এইবছর HSC দেওয়া সালমানের লাল লাল নাকওয়ালা ক্যারেক্টার সমৃদ্ধ একটা আঁকার স্টাইল আছে। ফেসবুকে নিজের পেইজ Shahstuff এ আঁকাআঁকি করে বেশ জনপ্রিয় এই ইয়াং কার্টুনিস্ট।


প্রথম প্রিন্ট মিডিয়ার কাজ শুরু হয় ডেইলি স্টার এর শাউট ম্যাগাজিনের কভার করার মধ্য দিয়ে । এঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার পাশাপাশি ফেসবুকে নিজের পেইজে আর র‍্যান্টেজেস পেইজের জন্য ইলাস্ট্রেশন করতো সালমান। র‍্যান্টাজেসে কাজ করতে করতে রুম্মান ভাই তাকে একদিন জিজ্ঞেস করেন শাউট এর কভার করতে আগ্রহী কী না। সেখান থেকেই শুরু। তারপর কিশোর আলো, রস+আলো, বিচ্ছু সবখানে কাজ করেছে সালমান। আর প্রিন্ট মিডিয়ায় আসার ২ বছর আগে থেকেই সিরিয়াসলি ইলাস্ট্রেশন আর কার্টুন আঁকায় ফোকাস করে সে। বর্তমানে ফ্রিল্যান্স ইলাস্ট্রেটর হিসেবে কাজ করছে Daily Star এর ফিচার পাতা Shout এ।

রাকিব রাজ্জাকঃ কিশোর আলো ম্যাগাজিন এর নিয়মিত আঁকিয়ে রাকিব রাজ্জাকের প্রিন্ট মিডিয়াতে আঁকাআঁকি শুরু কিশোর আলো এর হাত ধরে। সোশ্যাল মিডিয়াতে তার আঁকা দেখে আর আঁকাআকির ইচ্ছা দেখে তার কাছে থেকে কাজ নেয় কিশোর আলো। আর কালের কন্ঠ পত্রিকার ফিচার পাতায় আঁকা দিয়ে শুরু হয় দৈনিক পত্রিকায় কাজ করা। কাজ করেছে দৈনিক যুগান্তর আর প্রথম আলো তে। ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকি করতো রাকিব তবে একটু সিরিয়াসলি আঁকা শুরু করার ৪-৫ মাসের মধ্যেই সে প্রিন্ট মিডিয়ায় ডাক পায়।



বইয়ের ইলাস্ট্রেশন করার জন্য রাকিব প্রথম ডাক পেয়েছিল ২০১৭ তে কিন্তু সেবার সে কাজটা করেনি। এইবছর বইমেলায় সে চারটা চিলড্রেন বুক ইলাস্ট্রেশন করেছে শুভ্রপ্রকাশ এর জন্য। বিভিন্ন ম্যাগাজিন আর পেপারে রাকিবের কাজ দেখে ওরা রাকিবকে কাজটা দেয় বলে জানিয়েছে রাকিব।

মাঝেমাঝে ইয়াং কার্টুনিস্টদের কাছ থেকে আমাদের প্রশ্ন শুনতে হয়, "ভাই কিভাবে অমুক পত্রিকায় আঁকবো, বা অমুক ম্যাগাজিনে আঁকার উপায় কি? বা কিভাবে বইয়ের কাজ করবো?
একটি পত্রিকার একটা সাপ্লিমেন্টে অথবা একটা ম্যাগাজিনের বিভিন্ন আর্টিকেল বা গল্পের জন্য মাল্টিপল আর্টিস্ট এর কাজ রাখা হয়। আর মাল্টিপল আর্টিস্ট রাখা তো অনেকক্ষেত্রে পত্রিকার পক্ষে সম্ভব নয় তাই তারা ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট(কন্ট্রিবিউটর আর্টিস্ট) দের দিয়ে কাজগুলি করিয়ে নেয়। দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় 'বিচ্ছু' ম্যাগাজিনে যখন কাজ করতাম তখন আমাকে আর আমার এডিটরকে অনেকে রিকুয়েস্ট করে বলতো ভাই আমিও কার্টুন আঁকি, আমার আঁকা দেখেন, পত্রিকায় ছাপেন প্লিজ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সেই আঁকাগুলি দেখতাম আর বলতাম ভাই আমাদের লাগলে পরে আপনাকে জানাবো অথবা বলতাম ভাই আরো একটু ভাল করতে হবে আপনার আঁকা।

এমন না যে আমাদের আর্টিস্টের দরকার ছিলনা। কাহিনী হচ্ছে আমাদের আসলে একটু ভাল আঁকে এমন কন্ট্রিবিউটর আর্টিস্ট দরকার ছিল। আমি আর আমার এডিটর নিজেরাই কিছু কিছু কন্ট্রিবিউটর আর্টিস্টকে নক দিয়ে বলতাম ভাই আমাদের জন্য এটা এঁকে দেন। যুগান্তরে বিচ্ছুতে কন্ট্রিবিউটর আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করতো রিদম, মাহাতাব, মৌমিতা, সালমান সাকিব, শুভংকর তনি, দেবাদৃতা পিউ, ঐশিক, ইশমাম, রাকিব সহ অনেকেই। তারা তাদের হাজারো ব্যস্ততার মাঝেই আমাদের জন্য কার্টুন এঁকে দিতেন। এই আর্টিস্টরা দেশের অনেকগুলি পেপার ফিচার আর ম্যাগাজিনের সাথে যুক্ত আছেন এবং নিয়মিত আঁকছেন। এদের কেউ চারুকলার পড়াশুনা করছেন, আবার কেউ ডাক্তারি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনা করছেন। কেউ কেউ আছেন এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। এমন না যে সবাই একদম ঘাঘু প্রফেশনাল। কিন্তু এরা ভাল কাজ করেন এবং দিনে দিনে নিজেদের কাজ উন্নত করছেন। এদের অনেকেরই কাজ করা বই,কমিক্স পাবলিশ হয়েছে এর মধ্যেই।

ব্লগের এই সিরিজের বড় বড় পোস্টগুলি লেখার একটাই কারন। কারনটা হচ্ছে একটা ব্যাপার ব্যাখ্যা করা। ব্যপারটা হল সবসময়ই কারো না কারো কাজের দরকার আছে। আপনি যদি মোটামুটি আঁকতে পারেন তবে আপনাকে দিয়ে কেউ না কেউ কাজ করাতে চাইবেই। তাই নিজের আঁকা কোথাও ছাপানোর আগ্রহের পাশাপাশি আঁকা ভাল করার প্রতিও আগ্রহ থাকতে হবে। আপনি যদি বিগিনার কার্টুনিস্ট/আর্টিস্ট হোন আর বিশেষ কোন পত্রিকার পাতায় বা ম্যাগাজিনে আঁকতে চান তবে সেই পত্রিকার পাতা অথবা ম্যাগাজিন ফলো করেন। ওই পাতার বা ম্যাগাজিনের আর্টিস্টরা কিরকম আঁকছেন সেটা ফলো করেন। উনাদের মতো আঁকতে না পারলেও অন্তত উনাদের আঁকার ধারেকাছে যেতে পারেন কিনা সেটার চেষ্টা করেন। কিপ প্র্যাকটিসিং।

এরপর কি করবেন সেটা বিস্তারিত জানতে চাইলে এই সিরিজের পরের পোস্ট পড়ুন এই লিংকে ক্লিক করে। আজকের মতো এ পর্যন্তই। বিদায়।