Tuesday, February 20, 2018

এবারের বইমেলার হতাশা এবং অন্যান্য

আমি ফ্রিল্যান্সে প্রফেশনালি আঁকা শুরু করি ২০১৫ এর শেষ দিকে এসে।
একজন জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে প্লাস বাইরের দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার কারনে সেই সময় নিজের জন্য কিছু কোড বা অভ্যাস ডেভেলপ করি আমি। কোডগুলি ছিল
১) কারো জন্য কাজ করার সময় সিকিউরিটি হিসেবে আ্যডভান্স নিয়ে রাখা কাজের শুরুতেই।
২) ক্লায়েন্টের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে নিজের সাজেশন আর সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করে দেওয়া।
৩) যত যাই হোক ডেডলাইন মিস না করা।
আর
৪) স্পেসিফিক কিছু পার্সন ছাড়া আর নিজের মন না চাইলে আর কারো জন্যই ফ্রী তে বা কারো রিকুয়েস্টের কাজ না করা।
২০১৬ থেকে দেশি ক্লায়েন্টদের জন্য, বইমেলার জন্য কাজ করা শুরু করি আর একেক রকম তিক্ত মধুর (বেশিরভাগই তিক্ত) অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই।
এবারের বইমেলায় আমার গুরুর প্রকাশন ঢাকা কমিক্স এর বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করার পাশাপাশি কাজ করেছি বইমেলার জন্য আরেকটি বইয়ের কাজে। যেখানেই সব ঝামেলার শুরু।
বইয়ের লেখক অখ্যাত কিন্তু ভাল লিখেন। আমাকে ডেকে বললেন ভাই রোমেল আমার জন্য কিছু কাজ করে দাও। আমি কিন্তু তোমাকে তেমন কোন টাকাপয়সা দিতে পারবোনা। অনেকটা জোর করেই গছিয়ে দিলেন আমাকে উনার কাজ। যাই হোক, লেখাগুলি আমার বেশ ভালই লাগলো। আমিও ভাবলাম থাক কাজটা আমি করে দেই উনার জন্য। টাকা না পাই কিন্তু কাওকে দেখানোর মতো একটা কাজ হবে। টোটাল ৭০ টার মতো কার্টুন আর ইলাস্ট্রেশন। এই বইমেলার ব্যস্ততায় বিশাল কাজ ধরতে গেলে। আমি ঢাকা কমিক্স আর আমার কিছু ফ্রিল্যান্স কাজের ফাঁকেই উনার এই বিশাল কাজ নামিয়ে দিলাম ঘুমিয়ে না ঘুমিয়ে, রাত জেগে, এক্সট্রা গ্রাফিক ডিজাইনারের হেল্প নিয়ে, ব্যাক পেইনের মতো প্যারা নিয়ে।
যে কাজটা আমাকে বিনিময়ে দিয়েছে
১) অমানুষিক পরিশ্রম
২) ঢাকা কমিক্সের প্রজেক্টের ডেডলাইন মিস করা
৩) এক ছোট ভাইয়ের কমার্শিয়াল কাজের ডেডলাইন মিস করা
৪) অতি অল্প পারিশ্রমিক। যার এক ভাগ আমি দিয়ে দিয়েছি আমাকে যে গ্রাফিক ডিজাইনার হেল্প করেছিল ওকে।
৫) কভার চেঞ্জ করার মতো ঝামেলা।
এতো কিছুর পরেও একটা আশা ছিল ভাল একটা বই হবে যেটা আমি কাওকে দেখাতে পারবো। যে বইয়ের প্রতি পাতায় আমার আঁকা কার্টুন আর ইলাস্ট্রেশন।
যাই হোক, কাল আমি আর ছোট ভাই রিফাত সে বই দেখতে গেলাম স্টলে। বই দেখেই আমার মন-মেজাজ ভাল(!) হয়ে গেলো। কারন
১) বইয়ের কভার। ফ্ল্যাপসহ কভারের প্লেসমেন্ট কেমন হবে সেটা বুঝানোর জন্য আমি একটা মকআপ/স্যাম্পল দিয়েছিলাম। তারা সে মকআপটাকেই কভার করে ফেলেছে। যার কারনে কভারের ডিজাইন, বইয়ের নাম এসব দেখাই যাচ্ছেনা। অত্যন্ত বাজে একটা কভার হয়েছে না চাইলেও যেটার ক্রেডিট আমার।
২) ভেতরের কিছু কিছু ইলাস্ট্রেশনে আমার আঁকা সরিয়ে গুগুল থেকে ডাউনলোড করা ছবি বসিয়ে দিয়েছে। কেউ যখন এই বই দেখবে তখন তার ধারনা হবে আমি এই কাজ করি কারন অলংকরনে আমার নাম জ্বলজ্বল করছে। বাহ বাহ বাহ কি সুন্দর অ্যাড আমার।
৩) আমার নামের বানান ভুল। আমার লেটারারের নামের বানান ভুল।
৪) বাজে বাইন্ডিং
৫) বাজে প্রিন্টিং
কল করলাম লেখককে। লেখক এখনো সে বই ভালমতো দেখেন নি কারন তিনি এখনো বইমেলায়ই যান নি! গরম মাথায় যাচ্ছে তাই শোনালাম। আর বলে দিলাম আর কখনো যেন আমার সাথে যোগাযোগ না করেন। বইটা কাওকে দেখানো তো অনেক অনেক দূরের কথা নিজের কপিই আর সংগ্রহ করিনি। আসলে নিজেরি ভুল। বাসায় এসে নিজেকে থাপ্পড় মেরে মেরে বললাম, আরো কর ফ্রি কাজ, দেখা আরো মানবতা, নিজের কোড ভাং আরো, শিক্ষা নে গর্ধব কোথাকার।
কিছুদিন আগে দেখলাম এক লেখক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আর্টিস্টরা তাদের সাথে তাংফাং করেন। বলতে ইচ্ছে হলো। এটাই করতে হবে এই দেশে। রোমে থাকতে গেলে রোমান না হয়ে উপায় নেই। বা*ছা*



বিঃ দ্রঃ  সেলফ রিমাইন্ডার হিসেবে লেখাটা ব্লগে তুলে রাখা। 

Sunday, February 18, 2018

জন্মদিন গিফট ফর ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফেভস

আঁকাআঁকিতে আমার দুর্বলতার মাঝে একটা হচ্ছে ক্যারিকেচার! অনেক কাহিনীর পর হাল ছেড়ে দিয়েছি। মাঝেমাঝে মন চাইলে আঁকতে বসি আর কিভাবে যেন মোটামুটি চেহারা মিলিয়ে ফেলি। আবার যখন কারো ক্যারিকেচার করবো সিদ্ধান্ত নিয়ে আঁকতে বসি তখন আর মেলে না। এ মাসের এগারো তারিখে ছিল বন্ধু চুইল্লা আসিফ আর সোবহান ভাই (ইনার লেখা আমার ভাল্লাগে) এর জন্মদিন। হঠাৎ মনে হলো এদের ক্যারিকেচার করা যাক। ধুপধাপ নামিয়ে ফেললাম ।    
চুইল্যা আসিফ
সোবহান ভাই


ভূত এর বাচ্চা!

গত সপ্তাহ ধরেই বইমেলায় বইপ্রেমীদেড় ভিড় বেড়েছে আর বেড়েছে আমাদের ব্যস্ততা। এর মধ্যে গত কদিন ছিল পহেলা ফাল্গুন-ভ্যালেনটাইনস ডে - শুক্রবার - শনিবারের ব্যস্ততা। শিশু অ্যাকাডেমির কমিক্সটার কাজ করার সময়ও বেশ কবার যাওয়া হয়েছিল মেলায়। ওটার কাজ কমপ্লিট করার পরে বেশিরভাগ দিনই দুপুরে ঘুম থেকে উঠে ছুটতে হয়েছে স্টুডিওতে। ওখান থেকে বইয়ের বান্ডেল নিয়েই হয় আমি আর মেহেদী ভাই অথবা আমি অথবা স্টলের সেলসের কেউ না কেউ মিলে আবার বইমেলায়। এরপর স্টলে সময় দেওয়া, বন্ধুবান্ধব, ইউনিভার্সিটির সিনিয়র জুনিয়র, পরিচিত আর্টিস্ট, ভাই বেরাদারদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ, সবাই মিলে মেলায় বই দেখে বেড়ানো এইসব করে করেই এই মাস কিভাবে যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে টেরই পাচ্ছিনা। প্রত্যেকটা দিনই মজার আর আনন্দের। অনেকের সাথে দেখা হচ্ছে যাদের সাথে শুধুমাত্র অনলাইনেই পরিচয় ছিল। এই পার্টটা বেশ মজার। ঢাকা কমিক্সের হার্ডকোর ফ্যানদের সাথে দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে স্টলে। তাদের অভিমত জানতে পারছি। প্রিয় লেখকদের সাথে আর্টিস্টদের সাথে দেখা হয়ে যাচ্ছে, কমিক্সের মার্কেট অবজার্ভ করছি। বেশ দারুন সব অভিজ্ঞতা। রাতে বস আহসান হাবিব এর নেতৃত্বে সবাই মিলে বইমেলা প্রাঙ্গন ছেড়ে বাসার দিকে রউনা দেওয়া, এগারটার দিকে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে ফেসবুকে ইন্সটাগ্রামে সারাদিনের কাজকর্মের জাবর কাটা। লাইফ ইজ টু গুড। 

এর মধ্যে তেমন কোন কাজকর্ম করতে পারিনি। কাজ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু দেখি হয়না। পরে মেলায় মিতু আপুর সাথে আড্ডায় এক ফাঁকে এটা বলায় বললেন এই মাসে ব্যস্ততায় কিছু হবেনা। বাদ দাও। মেনে নিয়ে আর জোর করিনি নিজের উপর। কোন রকম সিরিয়াস আঁকাআঁকি ছাড়াই কাটাবো ধরতে গেলে এই মাস। 
অনেক দিন পর আজ দিন কাটালাম ঘুমিয়ে আর বসে থেকে থেকে। দুপুরে ঘুম থেকে উঠে মেহেদী ভাইয়ের মেসেজ পেলাম। তারপরেই স্টুডিওতে গিয়ে স্টলের একজন সেলসপার্সন কে বইয়ের বান্ডেল বুঝিয়ে দিয়ে সিএনজি তে করে মেলায় পাঠানোর পর বাসায় ফিরে এসে খেয়েদেয়ে আঁকতে বসলাম। কাল রাতে একটা ভুতের ছা এঁকেছিলাম। আজকে বাকিগুলো আঁকলাম। কালার নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করলাম। গত সপ্তায় শুধুমাত্র একটা মুভি দেখেছি। Moana.   মুভিটির কালার প্যালেট আর কনসেপ্ট আর্ট দেখে আমি মুগ্ধ। ভয়াবহ রকম মুগ্ধ। 

একদল ভূতের বাচ্চা

ভূতের বাচ্চাদের কালারিং এ আমি মোয়ানা থেকে ইন্সপায়ার্ড। এই ছবিতে প্রিয় শিল্পী মামুন ভাইয়ের কমেন্টসহ ওয়াও রি-অ্যাকশন আর ভয়াবহ প্রিয় শিল্পী উদয় দেব এর লাভ রি-অ্যাকশন পেয়ে আমার জম্বির মতো দশা হয়েছে। বুঝতে পারছিনা কি করিলাম, কি আঁকিলাম! :D 

Friday, February 9, 2018

SM Sultan

ম্যালা দিন বাদে আজ একটু ফ্রি হলাম। গত মাস থেকেই বইমেলার ব্যস্ততা শুরু হয়েছিল। এর মাঝেই মাল্টিপল কাজ করা হয়েছে। একটা ছড়ার বইয়ের কাজ করলাম যেটার জন্য প্রায় সত্তর টা কার্টুন+ইলাস্ট্রেশন করা হয়েছে আর সাথে দুইটা কভার ডিজাইন। এক ছোট ভাইয়ের জন্য ব্রান্ড ডিজাইন, রবিন ভাইয়ের একটা কাজ আর শিশু একাডেমীর জন্য একটা রূপকথার কমিক্স। এই কমিক্সটি ভালই সময় নিয়েছে আর কাজটি ছিল আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং যার কারনেই বেশি সময় নিয়েছে আর করার সময় বেশ ভয়ে ভয়ে ছিলাম। কারন কাজটি করেছি ঢাকা কমিক্স এর হয়ে। পেন্সিলিং ছিল আসিফ ভাইয়ের, মেহেদী ভাইয়ের আর আমার। আমার সম্পূর্ণ কাজ হলে ভংচং করে একটা নামিয়ে দিতাম। কিন্তু আসিফ ভাই আর মেহেদী ভাই যেহেতু ছিল সেহেতু চেষ্টা ছিল যা জানি পারি তা সম্পূর্ণ দেওয়ার। দিয়েছিও। মেহেদী ভাই আর আসিফ ভাই দেখে বলেছে ভাল হয়েছে। এরপরে শান্তি। ওটার কভার সহ অন্য কাজগুলির ফাইলপত্তর পাঠিয়ে আজ একটু নিঃশ্বাস ফেললাম। এর মাঝে বইমেলায় যাওয়া হয়েছে বেশ কবার স্টলের কাজে। বইপত্তরও কেনা হয়েছে অল্প কিছু। আরো যেতে হবে অনেকবার এইবারের বইমেলায়। এই মাসে নিজের জন্য ধরতে গেলে কিছুই আঁকা হয়নি। এই একটা ক্যারিকেচার ছাড়া। তাও অসীম এর বাংলাক্যাচার গ্রুপের জন্য নামানো ধুপধাপ। আবার মিতু আপুর নতুন কমিক্সে হাত দিতে হবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আর একটা ব্র্যান্ডিং এর কাজ আছে হাতে। পিপিএইচে নতুন একটা কাজের জন্য নক পেলাম আর প্রথম আলো এর "রস-আলো" তে ফ্রিল্যান্স কাজের অফার পেলাম এর মাঝেই। চাকরি থেকে নাই হয়ে যাওয়ার পর ব্যস্ততা বেড়ে গেছে শতগুণে। আজ অনেকদিন বাদে ভাবলাম কোন কাজ-কাম করবোনা। মুভি দেখি আর ঘুমাই টুমাই। কিন্তু মুভি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। ভাল্লাগছেনা হুদাই বসে থাকতে। :D  
ক্যারিকেচারঃ এসএম সুলতান

চার তারিখের কথা। ঘুমাতে গিয়েছি সকালে কিন্তু আমার ঘুম আসেনা। মোটামুটি প্যানিকড হয়ে গেলাম। শিশু একাডেমী এর কাজটা নিয়ে। মেহেদী ভাইকে ওটা কমপ্লিট করে দেওয়ার কথা ছিল পাঁচ তারিখে। কিন্তু তখনো তিন পেইজ ইংকিং আর পাঁচ হয় পেইজ কালার আর কভারের কাজ বাকি। আমি ঘামতে শুরু করলাম ওই শীতের সকালে। আর ভাবতে লাগলাম কি করেছি এই কদিনে। কিছুই তো করিনি। না ঘুমিয়ে আবার কাজ শুরু করবো কিনা যেই ভাবতে গেছি তখন একটা গল্পের আইডিয়া পপ করলো মাথায়। সেই গল্পের কমিক্স নামিয়ে ফেলবো ভাবছি এর মধ্যে সম্ভব হলে। মার্চ মাস থেকে বড় একটা প্রজেক্টের কাজ শুরু করবে বলে ভাবছেন গুরু। দেখা যাক কি হয়। জীবন সুন্দর। B{