Friday, May 31, 2019

বিগিনার কার্টুনিস্ট/আর্টিস্টদের জন্য দেশি পত্রিকায়/ম্যাগাজিনে ফ্রিল্যান্স কাজঃ ০১

প্রথমে ভেবেছিলাম একটা ব্লগপোস্ট লিখে ফেলি কিভাবে দেশি পত্রিকার ফিচার পাতায় বা ম্যাগাজিনে কাজ করার স্কোপ পাওয়া যায়। কিন্তু লিখা শুরু করার পর বুঝতে পারলাম "কেন একজন কার্টুনিস্ট/ইলাস্ট্রেটরকে নিজের আঁকা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরেও মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হবে" তা নিয়ে একটা সূচনা থাকা দরকার মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে। সেই সূচনা লিখতে গিয়ে সেটার সাথে বিশাল এক রচনাও লিখে ফেললাম। কেউ যদি সূচনা পড়ার পর রচনা বাদ দিতে চান তবে "অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন" বলে এই লিংকে ক্লিক করে সরাসরি চলে যান এই সিরিজের তিন নাম্বার পোস্টে। আর কারো যদি অসীম ধৈর্য থাকে তবে এই পোস্টের রচনাটাও পড়ে দেখতে পারেন। :3

সূচনাঃ "কেন আঁকি" কেউ যখন এই প্রশ্ন করেন আমাকে তখন আমি উত্তর দেই, "আঁকতে ভাল্লাগে তাই আঁকি!" আমার মতে যারাই আঁকাআঁকি করেন তারা সবাই ভালবেসেই আঁকাআঁকি করেন। ভাল্লাগে বলে আঁকেন। সেটা পোর্ট্রেট, ক্যারিকেচার, কার্টুন, পেইন্টিং, গ্রামের দৃশ্য, বনজঙ্গল, নদী নালা বিল্ডিং, ডুডল যাই হোক। আমরা যারা কার্টুন কমিক্স ইলাস্ট্রেশন এসব আঁকি আমাদের কার্টুন আঁকা শুরু হয় টিভিতে কার্টুন শো দেখে আর বইয়ের পাতায়, পত্রিকায় বা ম্যাগাজিনের কার্টুন, গল্পের ইলাস্ট্রেশন এসব দেখে দেখে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রিয় ক্যারেক্টারদের আঁকতে গিয়ে অথবা প্রিয় শিল্পীদের, কার্টুনিস্টদের আঁকা কপি করতে করতেই একসময় আমরা নিজেদের মত করে আঁকা শুরু করি। আর আঁকতে আঁকতেই মাথায় আসে যদি আমার আঁকা আমি অমুক ম্যাগাজিনে বা তমুক পত্রিকায় দেখতে পেতাম তাইলে বেশ হতো। আমারও মনে হতো এমন। এখনতো ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। যোগাযোগ সহজ হয়ে গিয়েছে, জানার শেখার পরিধি বেড়েছে আমাদের। নিজদের প্রতিভা আর সৃষ্টি এক ক্লিকেই পৃথিবীর সামনে তুলে ধরা যায়। লেখকরা লিখেন, লিখেই সে লেখা নিমিষেই ছড়িয়ে দিতে পারেন ভক্তদের মাঝে সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে। আঁকিয়েরা আঁকেন, এঁকে চিত্রকর্ম পোস্ট করে দিতে পারেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। মুহূর্তেই লাইক, কমেন্ট আর শেয়ারের বন্যা বয়ে যায়। ক্রিয়েটরের ভাল লাগে এই বন্যা দেখে। তিনি আবার লিখতে বসেন অথবা আঁকতে বসেন। আবার পোস্ট করেন। আবার লাইক, কমেন্ট আর শেয়ারের বন্যা। বন্ধুরা লেখককে বলেন "আরে বাহ! দারুন লিখেছিস/লিখেছো/লিখেছেন তো! আঁকিয়েকে বলেন "আরে বাহ! দারুন এঁকেছিস/এঁকেছ/এঁকেছেন তো! যত রেসপন্স তত ভাললাগা!
আমরা ভুলে যাই এই রেসপন্স সাময়িক। এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় ট্রেন্ড আর টপিক চেঞ্জ হয়। আপনি আজ যে বিষয়ে লিখছেন বা আঁকছেন সেটা কালকের মধ্যেই আউটডেটেড হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে আপনি নিজেই ভুলে যাচ্ছেন। এবং প্রতিনিয়ত ট্রেন্ডকে ফলো করতে গিয়ে দেখা যায় অনেক লেখক নিজের যা ভাল লাগে তা নিয়ে আর লিখেননা আর অনেক আঁকিয়ে নিজের জন্য আঁকেননা। পাবলিক ডিমান্ডের কথা ভেবে কাজ করতে করতে আমরা নিজেদের জন্য কাজ করার কথা ভুলে যাই। কারন নিজেদের জন্য কাজ করলে অনেক সময় লাইক, কমেন্ট কম হয়। তার চেয়ে পাবলিক ডিমান্ড ধরা ভাল। একসময় দেখা যায় আমাদের নিজেদের জন্য কিছুই নেই। একসময় যে কাজ করেছিলাম সেসব কাজের কথা লোকে তো ভুলে গেছেই, আমরা নিজেরাও ভুলে গিয়েছি। কারন সে কাজের বিষয় এখন আর ট্রেন্ডে নেই। আরেকটা ব্যাপার আছে। সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদমের কারনে আপনার কাজ শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির মানুষের নিউজফিডেই পৌঁছাবে। অনেক মানুষ জানবেই না আপনি কে অথবা আপনি কি করেন। আমার গুরু মেহেদী ভাইয়ের সাথে হাঁটতে, চলতে আর তার কাছ থেকে শিখতে গিয়ে আঁকাআঁকি ছাড়াও যা জেনেছি সেটাকে যদি লিখতে যাই তবে এভাবে লিখা যাবে
"মূল ধারার প্রিন্ট মিডিয়ার সুবিধা হলো এই মাধ্যমের আওতাটা অনেক বড়। একটা পত্রিকার জন্য যখন তুমি আঁকছো তখন তুমি অনেক মানুষের জন্য আঁকছো। যদি তোমার আঁকা কোন পত্রিকায় ছাপা হয় তবে সে আঁকা পুরো দেশের কোটি কোটি মানুষ দেখবে। তোমার আলাদা একটা পরিচিতি আসবে। সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরেও লোকজন তোমাকে চিনবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তোমার কাজের একটা ডকুমেন্টেশন থাকবে। সেটা একটা পত্রিকার পাতা হোক বা হোক ম্যাগাজিনের পাতা। এভাবে তুমি একদিন জানতে পারবা প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য কিভাবে কোন স্টাইলে কি ধরনের কালার নিয়ে কাজ করলে সুবিধা বা দেখতে ভাল দেখায়। তোমার কাজ পত্রিকায় বা ম্যাগাজিনে ছাপা হলে ইন্ডাস্ট্রির সাথে জড়িত লোকজন তোমার কাজ দেখবে আর ইলাস্ট্রেটর বা কার্টুনিস্ট হিসেবে দেশি ইন্ডাস্ট্রিতে লোকে তোমাকে চিনতে শুরু করবে। হয়তোবা এই পরিচিতির জোর ধরেই কোন বইয়ের প্রকাশকের কাছ থেকে ডাক পাবে বইয়ের ইলাস্ট্রেশন করার জন্য। একজন মানুষ যদি আঁকিয়ে বা লেখক হয় তবে তার কাজের একটা ডকুমেন্টেশন থাকা উচিত। এবং লেখক বা আঁকিয়ের জন্য বইয়ের চাইতে ভাল ডকুমেন্ট আর হয়না।"
আসলেই তাই। শত শত বছর ধরে বই থেকে যাবে। কেউ আপনার বইটা কিনলে সে বই তার বুক শেলফে থাকবে। তার বাসায় কেউ বেড়াতে আসলে সে বই তার চোখে পড়বে।সে লোক হতে পারে আপনার একজন পটেনশিয়াল ভক্ত অথবা ক্লায়েন্ট। এখানে অন্যের জন্য ম্যাগাজিন, বই বা কমিক্সের কাজ করতে করতে একদিন দেখবেন আপনার নিজের জন্যই নিজের মতো করে একটা কিছু করার সাহস আর কনফিডেন্স পাচ্ছেন।

বাইরের দেশের বড় বড় আর্টিস্ট/কার্টুনিস্ট/ওয়েবকমিক আর্টিস্টদের খেয়াল করলে দেখতে পাবেন তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ বিখ্যাত। ইউটিউবে, ইন্সটাগ্রামে, ওয়েবকমিক্সের সাইটে তাদের মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার। বিশাল অনলাইন এক্সপোজারের কারনে তাদের অনেকে চেনেন এবং তারা কাজ করে সময় পান না। অনেকেই ডিজনি, ড্রিমওয়ার্কস, পিক্সারের মতো বড় বড় অ্যানিমেশন ফার্মে জব করেন। এরপরেও তাদের দেখবেন নিজেদের বই পাবলিশ করার একটা চেষ্টা থাকে। কোন পাবলিশার না পেলে তারা নিজেরাই কিকস্টারটার বা বিভিন্ন ফান্ড রেইজিং কোম্পানির মাধ্যমে ফান্ড রেইজ করে নিজেদের বই পাবলিশ করেন। ব্যাপারটা আর কিছুই না। নিজের কাজের একটা সলিড ডকুমেন্টেশন। তারা কাজ করছে অন্যের জন্য, একটা অ্যানিমেশন ফার্মের জন্য। কাজটা তাদের নিজেদের নয়। কাজের মালিক হচ্ছে কোম্পানি বা একজন ক্লায়েন্ট। তারা বড়জোর বলতে পারেন অমুক মুভিতে তমুক অংশের কাজটা আমার করা। যার কারনে তারা সবসময়ই চেষ্টা করেন নিজের জন্য বই পাবলিশ করার।

আপনি যদি একটা বিষয় নিয়ে আঁকেন লিখেন তবে সেটা আপনার একটা প্রজেক্ট। আর আপনি যদি সেই প্রজেক্ট পাবলিশ করতে পারেন তবে সেটা একটা প্রোডাক্ট। লোকে আপনার মুখে মুখে বলা প্রজেক্ট চায়না তারা একটা প্রোডাক্ট চায়। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার নিজেদের লেখা আঁকা শেয়ার করার পাশাপাশি আমাদেরকে মেনস্ট্রিম মিডিয়ার কথাও মাথায় রাখতে হবে। চেষ্টা করতে হবে নিজদের কাজের যেন একটা সলিড হার্ডকপি থাকে। যেটা আমি কাওকে দেখাতে পারবো আর বলতে পারবো এইতো আমার কাজ। আমি কিন্তু এখানে সোশ্যাল মিডিয়ার বিপক্ষে কিছু বলছিনা। সোশ্যাল মিডিয়াকে আমাদের পক্ষে রাখতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াকে আমাদের ব্যবহার করতে হবে অস্ত্র হিসেবে। যাতে আমাদের সাপোর্ট গ্রুপকে (ভক্ত, ফ্যান, এসি, ফ্রিজ) আমরা জানাতে পারি আমরা কি নিয়ে কাজ করছি, কিভাবে কাজ করছি। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে আমরা আমাদের কাজ মানুষের কাছে পৌঁছাব। আর সে মানুষরাই আমাদের বই/সৃষ্টি কালেক্ট করে আমাদের সাপোর্ট করবে। আপনার এক লক্ষ ফ্যান ফলোয়ারের মধ্যে যদি এক হাজার জন মানুষ আপনার বই সংগ্রহ করে তবে সেটাই সার্থকতা। সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের তৈরি। তাই সোশ্যাল মিডিয়াকে আমরা ব্যবহার করবো, সোশ্যাল মিডিয়া যদি আমাদের ব্যবহার করা শুরু করে তবে সমস্যা!

রচনাঃ  এই রচনা পড়ে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে আমি শখের আঁকিয়ে থেকে প্রফেশনালি আঁকাআঁকি শুরু করেছিলাম। ২০০৬-৭ সালের কথা।  প্রথম আলোর সাথে "আলপিন' ম্যাগাজিন দেওয়া হতো। আলপিনে মানিক-রতন ভাইদের কার্টুন, মেহেদী হক সহ অন্যান্য বড় বড় কার্টুনিস্টদের আঁকা কার্টুন দেখতাম আর কপি করতাম বসে বসে। আর ভাবতাম এতো সুন্দর করে কিভাবে আঁকে! কিভাবে আলপিনে আঁকা যায়। এরপর আলপিন বন্ধ হয়ে গেলো। রস+আলো চালু হল, যুগান্তর পত্রিকার সাথে দেওয়া হতো 'বিচ্ছু' । এসব ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়া কার্টুনগুলি দেখতাম আর হাহুতাশ করতাম এরকম ভাল আঁকতে পারিনা বলে। মনের কোনে একটু আশা জাগতো একটু ভাল আঁকতে পারলে হয়তো আমিও আঁকতে পারতাম এইসব ম্যাগাজিনে। আর কপি করতাম বসে বসে এখান ওখান থেকে দেখে কার্টুনগুলি। তখন এখনকার মতো ইন্টারনেটের সুদিন ছিলনা। পড়ালেখার সুবাদে থাকতাম কাপ্তাইয়ে। কারো সাথে যোগাযোগ করা হয়ে উঠেনি। পত্রিকার সাথে পাওয়া ম্যাগাজিনই ছিল ভরসা।

এরমাঝে প্রায় এক বছর আঁকাআঁকি করিনি। ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম ২০১১ সালে। আমাদের প্রথম সেমিস্টারে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং ছিল সাবজেক্ট হিসেবে। সেই ড্রয়িং করতে গিয়ে কার্টুন আঁকার ব্যাপারটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রোগ্রামে এখানেওখানে আলপনা আর  চিকা মেরে বেড়াতাম আমরা কয়েকজনে মিলে। আর তখন সোশ্যাল মিডিয়ার গণজাগরণ শুরু হয়েছে। ইন্টারনেট এভেইলেবল। ফেসবুকে প্রিয় কার্টুনিস্ট আর্টিস্টদের ফলো করি। তাদের কাজ দেখি, কিভাবে করেন জিজ্ঞেস করলেই জানা যায় তাদের কাছ থেকে প্রায় সময়, তাদের কাজের প্রসেস দেন অনেকেই ব্লগে, ইউটিউবে, ফেসবুক পেইজে। আর গুগল তো আছেই। ক্লিক করেই জেনে নেওয়া যায় অনেক কিছু। আমি আবার কার্টুন আঁকা শুরু করলাম ২০১২-১৩ থেকে। প্রিয় শিল্পীদের কাজ, রস+আলো, উন্মাদ ম্যাগাজিনের কার্টুন কপি করতাম। নিজের থেকে ফ্যান আর্ট করতাম প্রিয় ক্যারেক্টারগুলির, আঁকতাম যা খুশি। এঁকে আকান্তিস গ্রুপে পোস্ট করতাম আর হেল্প পেলাম গ্রুপে থাকা সিনিয়র জুনিয়র সব প্রিয় শিল্পির কাছ থেকে। আঁকতাম, গ্রুপে দেখাতাম, ফিডব্যাক + কারেকশন নিতাম। আর ইম্প্রোভ করার চেষ্টা করতাম। ফেসবুকে নিজের ওয়ালে, পেইজে পোস্ট দিতাম আঁকা ছবি। এভাবে আস্তে আস্তে কাজ ডেভেলপ হতে থাকলো।


আমার ২০১৫ এর আঁকা ছবি
মিডিয়ামঃ ডিজিটাল

২০১৫ এর শুরুর দিকের কথা। ফাইনাল ইয়ার চলছে আমাদের তখন। একদিন ফেসবুকের পেইজে একটা টেক্সট পেলাম। এক ভাই টেক্সট দিয়ে জানালেন, ফেসবুকের আকান্তিস গ্রুপে আর আমার পেইজে আমার কাজ দেখে তার ভাল লেগেছে। তিনি ফ্রিল্যান্সে কাজ করেন। তো উনার প্রায় সময় কার্টুন ইলাস্ট্রেশন এসবের প্রয়োজন হয়। উনার সাথে আমি কাজ করবো কিনা। আমি রাজি হয়ে গেলাম আর উনার জন্য আঁকা শুরু করলাম। উনার জন্য একটা কার্টুন আঁকলাম আর সেই কার্টুনের জন্য উনি আমাকে ৫০০ টাকা দিলেন। স্টুডেন্ট লাইফে সেই ৫০০ টাকা আমার কাছে অনেক টাকা মনে হয়েছিল। এরপর উনার জন্য বেশ কিছু কাজ করা হয়েছিল। ২০১৫ এর শেষ দিকে এসে আমার গ্র্যাজুয়েশন শেষ হলো। এবং আঁকাআঁকির ক্ষেত্রে দেখলাম মোটামুটি কিছু একটা একে দাঁড় করাতে পারছি। ছোটখাটো একটা কনফিডেন্স এসে গেলো নিজের মধ্যে যে কেউ আঁকতে দিলে মাস্টারপিস না হোক কিছু একটা মোটামুটি এঁকে দিতে পারবো। ২০১৬ এর বইমেলা শুরুর আগে এক প্রকাশক ফেসবুকে আমার কাজ দেখে নক দিলেন আমাকে। উনার প্রকাশনী থেকে লেখক আনিসুল হক এর একটা চিলড্রেন বুকের জন্য ইলাস্ট্রেশন করি সেবার এবং সেটাই ছিল বইমেলায় আমার প্রথম কাজ।

এর মধ্যে একদিন গুরু মেহেদী হক ভাইয়ের সাথে কথা বলে উন্মাদ ম্যাগাজিনে একটা কার্টুন পাঠালাম। সেটি ছাপাও হলো। কোন প্রিন্ট মিডিয়ায় সেটি ছিল আমার আঁকা প্রথম কার্টুন। ২০১৬ এর মাঝামাঝি এসে একটা টেক্সট পাই ফেসবুকে। কালের কণ্ঠ পত্রিকার ফান সাপ্লিমেন্ট "ঘোড়ার ডিম" এর এডিটর মেহেদী-আল-মাহমুদ ভাই আমাকে নক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আমি ঘোড়ার ডিম এ কাজ করতে চাই কিনা। আমি এটাসেটা জেনে নিয়ে রাজি হয়ে গেলাম। কাজ করলাম কয়েকটা ইস্যুতে। তখন থেকেই মেইনস্ট্রিম নিউজ মিডিয়ায় আমার কাজ করা শুরু। আস্তে আস্তে বইয়ের ইলাস্ট্রেশন করার অফার পেলাম।

২০১৬ এর শেষ থেকে ২০১৮ এর শুরু পর্যন্ত দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রায় দেড় বছরের মতো চাকরি করার সুবাদে বেশ বড় একটা কার্টুন আর কভার কার্টুনের পোর্টফলিও হয়ে গেল আমার। বিভিন্ন বই আর কমিক্সে কাজ করলাম বিভিন্ন পাবলিকেশন আর ক্লায়েন্টের জন্য। ২০১৮ এর শুরুতে দৈনিক যুগান্তর ছাড়ার পর কাজ করা হয়েছে রস+আলো, কিশোর আলো আর কিশোর বাংলা ম্যাগাজিনের জন্য। এখনো সময় পেলে করা হয়। অন্যদের জন্য কাজ করার পাশাপাশি ২০১৪ সাল থেকে কাজ করছি নিজের সুপারহিরো ক্যারেক্টার লুঙ্গিম্যান নিয়ে। এ বছরের একুশে বইমেলায় ঢাকা কমিক্স থেকে পাবলিশ হলো লুঙ্গিম্যান কমিক্সের প্রথম সংখ্যা। কাজ করেছি ঢাকা কমিক্স, প্রজেক্ট টিকটালিক, UNHCR, সিসিমপুর, পাঞ্জেরী প্রকাশনী, মাইটি পাঞ্চ স্টুডিও সহ দেশি বিদেশি বিভিন্ন অর্গানাইজেশনের জন্য। সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে আমার আঁকা স্থান পেল পেপারের, ম্যাগাজিনের আর বইয়ের পাতায় পাতায়। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মেনস্ট্রিম মিডিয়ার ডাক পেতে আমাকে কাজ করতে হয়েছে প্রায় চার বছরের মতো।

এ তো গেলো কিভাবে আমি পত্রিকায় আর বইয়ের জন্য কাজ করা শুরু করেছিলাম সে কাহিনী। এবার সিনিয়র থেকে জুনিয়র আরো বেশ কয়েকজন কার্টুনিস্ট/ইলাস্ট্রেটরের সাথে কথা বলে প্রিন্ট মিডিয়ায় তাদের কাজ শুরুর অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হবে পরবর্তী পোস্টে।

এই লেখাটি লেখার সময় যে ভিডিও, পডকাস্ট আর ব্লগপোস্টগুলির হেল্প নিয়েছি সেগুলি দেখতে, শুনতে বা পড়তে চাইলে নিচের লিংকগুলি ভিজিট করুন