Sunday, June 11, 2017

পোর্টফলিও, কাজের মান, প্রফেশনালিজম আর অন্যান্য

আমার আঁকাআঁকির শুরু মূলত ছোটবেলা থেকেই। তবে ২০১২ সালটা আমার কাছে ইম্পরট্যান্ট। কারন তখন থেকেই আমি অন্য একটি জগতের সন্ধান পাই। সে লম্বা ইতিহাস । যাই হোক অনেক আগে থেকেই আঁকতাম কিন্তু কখনো ওসব রাখা হয়নি। ২০১২ থেকেই আবার আঁকাআঁকি শুরু হয় আর ফেসবুকে আঁকাগুলি পোস্ট করতাম। ফিডব্যাক নিতাম। ২০১৫ এর প্রথম দিককার সময়ের কথা। তখন আমাদের ফাইনাল ইয়ার ফার্স্ট সেমিস্টার শেষ হবে। এক ভাই ফেসবুকে আমার কাজ দেখে আমাকে নক দেন ওনার হয়ে কাজ করব কিনা জানার জন্য। আমি রাজি হয়ে যাই এবং উনার জন্যই প্রথম কার্টুন এঁকে আমি কামাই করি। প্রথম কার্টুনটা এঁকে আমি বিল পাই ৫০০ টাকা। :D ওনার জন্য ফ্রিল্যান্সে অনেক কাজই করেছিলাম। এখানে একটা ব্যাপার আছে। আমার কাজ কিন্তু উনি দেখেছিলেন আমার ফেসবুক পেইজে। আর আমার কাজ দেখেই উনার মনে হয়েছিল আমি উনার কাজ করতে পারবো। ফেসবুক পেজ আমার জন্য পোর্টফলিও হিসেবে কাজ করেছিল।

তো যাই হোক, ২০১৫ এর শেষ দিকে পড়ালেখা শেষে ফ্রিল্যান্সে আঁকাআঁকি শুরু করি এবং সবচে বড় চ্যালেঞ্জটা ফেস করি পোর্টফলিও নিয়ে। কারন কোন সম্ভাব্য ক্লায়েন্টকে দেখানোর মতো পোর্টফলিও আমার ছিলনা। আর এসব ক্লায়েন্ট রা ফেসবুকের পোস্টকে সাধারনৎ গোনেনা! এরপর আস্তে আস্তে কাজ করতে থাকি এবং পোর্টফলিও এর আইটেম বাড়াতে শুরু করি। আমি যত ধরনের কাজই পারি তার সব ধরনের কাজই পোর্টফলিওতে আপলোড করতে থাকি। এবং শুধুমাত্র পোর্টফলিওর জন্যই অনেক ছবি আঁকি আমি সে সময়ে। যখনই ফ্রিল্যান্সে কাজের জন্য প্রপোজাল পাঠাতাম তখন আমার পোর্টফলিও বলতো আমি কি ধরনের কাজ পারি। ২০১৬ এর মাঝামাঝি সময়ে কালের কণ্ঠ পত্রিকার রম্য ম্যাগাজিন "ঘোড়ার ডিম" এর সম্পাদক মেহেদী আল মাহমুদ ভাই আমাকে নক করেন উনাদের জন্য আঁকবো কিনা এই বলে। আমিও গুরু মেহেদী ভাইয়ের সাথে আলাপ আলোচনা করে রাজি হয়ে যাই। কয়েক ইস্যুতে এঁকেছিলাম যে অভিজ্ঞতা আমার পরে কাজে লেগেছিলো। প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য আঁকার ক্ষেত্রে কি কি বিষয় কন্সিডার করতে হয় সেটা মাথায় ঢুকেছিল তখন। এখানেও একই ব্যাপার। আকান্তিস গ্রুপে আমার আঁকা দেখে ঘোড়ার ডিম থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন ওনারা। আমাকে গিয়ে ধর্না দিতে হয়নি। কিন্তু তখন একটা অভিজ্ঞতা হয়। আমার অন্যান্য কাজ গুলি দেখানোর জন্য বলেছিলেন মেহেদী আল মাহমুদ ভাই। তখন কাজ দেখাতে গিয়ে খেয়াল হলো শুধুমাত্র আমার কাজ জমা রাখার জন্য একটা পোর্টফলিও দরকার আমার। কারন আগের পোর্টফলিওটা ছিল পিপল পার আওয়ার সাইটে যেখানে আমি ফ্রিল্যান্স কাজ করি। সেটা পিপল পার আওয়ারের বাইরে তেমন একটা কাজের না কাওকে দেওয়ার মতো। তখন আমি আমার প্রথম পোর্টফলিও সাইট তৈরি করি। যেটা পড়ে আবার কাজে লেগেছিল। বিচ্ছুর রিলঞ্চ এর জন্য একজন কার্টুনিস্ট খুঁজছিল দৈনিক যুগান্তর। নতুন এডিটর সিয়াম ভাই কে আমার পোর্টফলিও দেখিয়েছিল মাহাতাব। পোর্টফলিও দেখে আমাকে যুগান্তরে ডাকা হয় এবং আমার গুরু মেহেদী ভাই আর সিয়াম ভাই এস সাথে কথাবার্তা শেষে জয়েন করি অক্টোবর, ২০১৬ তে। এখনো চলছে বিচ্ছুগিরি... আমি জানি আমার পোর্টফলিওতে খুব হাই ক্লাস কাজ নেই কারন আমি এখনো নতুন। এখনো আমি সময় পেলেই পোর্টফলিও আপডেট করি। কিন্তু এতে কাজ চলে যাচ্ছে আপাতত। কারন কাওকে কাজ দেখানোর জন্য আমার পিসির ফোল্ডার বা স্কেচবুক ঘাঁটতে হয়না বা নতুন করে সময় নিয়ে এঁকে দিতে হয়না। সব এক জায়গায় অরগানাইজ করা আছে। জাস্ট লিংকটাই দিয়ে দেই। যতটুক পারি স্মার্টলি কাজ করার চেষ্টা করি। দুটা জায়গাতেই কিন্তু আমাকে ডাকা হয়। কারন তারা আমার কাজ দেখেছিল এবং তাদের মনে হয়েছিল আমি তাদের কাজ করতে পারবো। আমাকে নিজ থেকে ধর্না দিতে হয়নি কারো কাছে গিয়ে। এটাই আসলে নিয়ম। ক্রিয়েটিভ সেক্টরে আপনি যদি কাজ পারেন তবে আপনাকে কাজ খুঁজতে হবেনা। কাজই আপনাকে খুঁজে নেবে। কারন নিয়মিত কাজ করে এমন লোকের ধরতে গেলে অভাব চলছে। আমরা নিজেরাই বিচ্ছুতে কন্ট্রিবিউট করার জন্য কার্টুনিস্ট এর অভাবে থাকি মাঝেমাঝে। ইয়ার্কি ডট কমে গ্রাফিক ডিজাইন করার জন্য কাওকে পাওয়া যাচ্ছেনা। সেদিন আমার কাছে bengal beats এর রনি ভাই এলেন কি করা যায় তা নিয়ে পরামর্শ করার জন্য। উনাদের ও কার্টুনিস্ট আর ডিজাইনার দরকার। আমি মাহাতাব, ইরন সহ কয়েকজনের পোর্টফলিও দেখিয়ে তাদের কথা সাজেস্ট করলাম। কাজ করার লোকই পাওয়া যাচ্ছেনা... তবে এ কাজ কিন্তু কোনরকমে বুঝিয়ে দেওয়া কাজ নয়। মোটামুটি একটা কোয়ালিটি থাকতে হবে কাজে। যারা আপনার সার্ভিস নিচ্ছে তারা আপনাকে পে করছে কাজের জন্য। সুতরাং আপনি যদি এটা ভেবে থাকেন যে কোনরকমে কাজ করেই গছিয়ে দেবেন তবে সেটা কিন্তু হবেনা। তারা প্রফেশনাল লোকজন, কাজের জন্যও খুঁজে প্রফেশনাল কাওকে।

এখন কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলি। যুগান্তরে জয়েন করার পরের ঘটনা। একদিন এক জুনিয়র নক দিয়ে বললো সে আঁকতে চায়। বললাম বাহ তোমার কাজ দেখাও দেখি। সে বললো দাঁড়ান ভাই আমি এঁকে দেখাই। মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে। সে একটা পেপারে আঁকতে চায় কিন্তু দেখানোর মতো কোন কাজ তার নেই। যাই হোক সে কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা আঁকা নিয়ে ফেরত এলো। যে ধরনের আঁকাগুলি আমরা দেখতে পাই নারসারি বা ক্লাস ওয়ান টু এর বাচ্চাদের খাতায়। বললাম ভাই আরো ভাল করো আগে এরপর আমাদের সাথে যোগাযোগ করো। সে মানতেই চায়না। সে বলতে লাগলো ভাই আমাকে টাকা দিতে হবেনা। আমি আপনাদের ওখানে এঁকে এঁকে ভাল করবো আস্তে ধীরে। বললাম ভাই আমরা তো ফ্রি তে নিবনা তোমার কাজ আর আমরা একটু ক্লিনলি আঁকা একটু কোয়ালিটিফুল কাজ প্রেফার করি কারন এটা প্রফেশনাল ফিল্ড। ফেসবুক পোস্ট নয়। সে মানতেই চায়না। আরেকটা সাম্প্রতিক ঘটনা, এক কার্টুনিস্ট বিচ্ছুতে আঁকবে। আমাকে বিভিন্ন জনে ফোনে কল করে বলছে তার আঁকা বিচ্ছুতে ছাপা হওয়ার জন্য আমি যেন একটু দেখি/কথা বলি। বিরক্ত হয়ে গেলাম। আরে ভাই আগে নিজের কাজকে তো একটা লেভেলে আনেন। পরে খবর পেলাম সে এ ব্যাপারে আরো বেশ কজন ফেলো আর্টিস্টকে জ্বালাচ্ছে। একজন কার্টুনিস্ট তো বলেই বসলো ভাই এর মেসেজের রিপ্লাই দেবেন না। সে খুব ডেস্পারেট আর অসহ্য পাবলিক। সে এক অ্যাম্ব্যারাসিং পরিস্থিতি! আর মিডীয়ায় কাজের সময় দেওয়া হয় খুব কম। আজকে চার বক্স ছয় বক্স কার্টুন দিয়ে বলা হয় কালকে ডেলিভারি দেওয়ার জন্য। ঠিক সময়ে ডেলিভারি না পেলে মেকআপ এর সময় ঝামেলায় পড়ে যায় এডিটর। পনেরো বিশ মিনিটেই কার্টুন নামিয়ে দেওয়ার ঘটনা কম নয়। আমি নিজেই উঠতি একজন কার্টুনিস্ট এখনো। নিত্যই নতুন কিছু শিখছি। তবে কাজ চালানোর মতো একটা কোয়ালিটি আমার কাজে আছে এবং ওটা আনার জন্য খাটছি সে ২০১২ থেকে। পাঁচ বছরে একটা অবস্থানে এসেছি। আমার কাজ পারফেক্ট নয় সেটা আমি নিজে জানি তাই নিজের স্কিলকে ব্যাকগ্রাউন্ডে আপডেট করার চেষ্টা করছি প্রতিদিন। আসলে কেউই পারফেক্ট নয়। এ ব্যাপারে মেহেদী ভাইয়ের একটা পোস্ট আছে। অসাধারণ লিখেছেন গুরু। লেখাটি পাওয়া যাবে এখানে। তো এসব এখন কে বুঝাবে এসব পাবলিকদের !!! দেখে মনে হয় তাদের দু দিনের চেষ্টাতেই ফেম আর সাকসেস দরকার! এই লাইনে এসে একটা ব্যাপার ক্লিয়ার। এই লাইনে দুই দিনে কিছু হয়না আর শর্টকাট বলে কিছু নেই। ইটস অ্যা লং প্রসেস। হতাশা, সাফল্য, ব্যর্থতা সবকিছুর দেখা পাবেন এখানে।

আপনি যদি প্রফেশনালি কাজ করতে চান তবে আপনার একটা পোর্টফলিও রাখা ভাল। কারন আপনি কি কাজ পারেন সেটা ক্লায়েন্টকে বলে বুঝানো যাবেনা। আর ক্লায়েন্টও বুঝতে চাইবেনা।  তাকে আপনার দেখাতে হবে আপনি কি কাজ পারেন। এখানে পোর্টফলিও হিসেবে আপনার নিজের ওয়েবসাইট বা ব্লগই বা কোন বইয়ে/ম্যাগাজিনে/পেপারে করা কাজই বেশি প্রেফারেবল। ফেসবুকের পোস্ট এর লিংক দেওয়া প্রফেশনালিজম নয়। বা ক্লায়েন্টকে দেখানোর জন্য এখানওখান থেকে পুরনো কাজ খুঁজে রেডি করে দেখানোও প্রফেশনালিজমের মধ্যে পড়েনা। একটা পোর্টফলিও বানানো তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। ফ্রিতেই Blogspot/woprdpress/tumblr/.... ইত্যাদি সাইটে সুন্দর পোর্টফলিও বানানো যায়। অথবা ফেসবুকের একটি সুন্দর গুছানো পেজও পোর্টফলিও হতে পারে যেখানে শুধুমাত্র আপনার আঁকা থাকবে (এটা আমি প্রেফার করিনা যদিওবা)। জাস্ট নিজের করা ভাল এবং বিভিন্ন ধরনের কাজগুলির ছবি তুলে রাখলেন পোর্টফলিও ব্লগ/সাইটে/পেইজে। কেউ যদি আপনার কাজ দেখতে চায় তবে চট করে লিংকটি দিয়ে দিলেন। ব্যস হয়ে গেলো। তাকে আর ঝামেলা করতে হলোনা। সে আপনার পোর্টফলিও ঘুরেই বুঝে যাবে আপনাকে দিয়ে তার কাজ চালানো যাবে কি যাবেনা। অনেক বক বক করে ফেললাম। হ্যাপি কারটুনিং। :)

No comments:

Post a Comment