Wednesday, January 1, 2020

যেমন গেলো ২০১৯!

গেল বছর ব্যস্ততার কারনে (পড়ুন আলসেমির কারনে) ব্লগপোস্ট লেখা হয়নি তেমন বলতে গেলে। সারা বছরে মিলিয়ে মোটে আটটি পোস্ট লিখেছি। এই বছর প্রতি মাসেই অন্তত একটা পোস্ট দেওয়ার চেষ্টা করবো বলে ভাবছি। ব্যক্তিগত ঘটন-অঘটন বাদ দিয়ে বলতে গেলে ২০১৯ আমার আর্টিস্টিক ক্যারিয়ারের জন্য ভালই গিয়েছে। সারা বছরই ব্যস্ততায় কেটেছে ক্লায়েন্ট/ফ্রিল্যান্স/কমার্শিয়াল প্রজেক্ট নিয়ে। নিজের জন্য কাজ করা হয়েছে কম।
ছোট বড় অনেক কমার্শিয়াল আর পার্সোনাল প্রজেক্টেই কাজ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কাজগুলির লিস্ট করে রাখা যাক একটা;

১) নিজের সুপারহিরো কমিক্স লুঙ্গিম্যানঃ যদিওবা লুঙ্গিম্যান এর কাজ শুরু করেছিলাম ২০১৮ সাল থেকেই কিন্তু ২০১৯ সালেও করতে হয়েছে এই কাজ। ১৯ এর বইমেলায় ঢাকা কমিক্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে লুঙ্গিম্যান কমিক্সের প্রথম ইস্যু। এই কাজটা নিয়ে আমি হ্যাপি। মেহেদী ভাইকে ২০১৯ এ আরো কয়েকটা ইস্যু দেব বলেছিলাম যদিও কিন্তু কাজ করা আর হয়নি কমার্শিয়াল কাজের ব্যস্ততার চাপে। এই প্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে এই পোস্টে




২) রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠ্যবইঃ মিতু আপু আর মেহেদী ভাইয়ের সুপারভিশনে কাজ করা এই প্রজেক্ট ছিল ২০১৯ এর সবচেয়ে বড় আর দীর্ঘস্থায়ী প্রজেক্ট। কক্সবাজার এডুকেশন নামের এও প্রজেক্টটা  ছিল ইউনিসেফ এর। মিতু আপু আর মেহেদী ভাই কাজটা নিয়ে আমাদের নিয়ে একটা টীম করেছিলেন। টীমে ছিলেন মিতু আপু, মেহেদী ভাই, আসিফ ভাই, হাসিব ভাই, সব্যসাচী আর আমি। নিজেদের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি সারা বছরই আমরা এই প্রজেক্টে কাজ করেছি। হাজার হাজার ড্রয়িং করেছি সবাই মিলে। হ্যাঁ হাজার হাজার। :D 

মেহেদী ভাই, আসিফ ভাই আর মিতু আপু অনেকগুলি বই। আর আমরা বাকিরা করেছিলাম ফ্ল্যাশকার্ড আর স্টুডেন্ট বুকের ইলাস্ট্রেশন। আমি কাজ শুরু করেছিলাম ১৯ এর মার্চ-এপ্রিলের দিকে। কয়েকশ ছবি এঁকেছিলাম এই কাজের জন্য আমি। আর নভেম্বরে এসে করেছিলাম স্টুডেন্ট বুক মেক-আপের কাজ। এই মেক-আপের কাজের জন্য নতুন করে ইন-ডিজাইন সফটওয়্যার এর কাজ শিখতে হয়েছিল আমাকে। ঢাকা কমিক্সের নতুন স্টুডিওতে গিয়ে গিয়ে মিতু আপুর কাছ থেকে কাজ শিখে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মেক-আপের কাজ নামিয়ে দিয়েছিলাম। আসলে এই কাজের জন্য আমরা সময় পেয়েছিলাম কম। প্রত্যেকবার নিজেদের ব্যাচে যা পড়েছিল তা সাবমিট করার জন্য টাইট ডেডলাইন থাকতো। এই সময়ের মধ্যেই আমরা কাজ নামিয়ে দিয়েছি। বেশ ভাল হয়েছে সবার কাজই। অনুমতি না থাকায় কোন কাজ এখনো শেয়ার করা যাচ্ছেনা তবে আশা করি ভবিষ্যতে শেয়ার করবো। এই প্রজেক্ট সম্পর্কে আরো জানা যাবে মেহেদী ভাইয়ের এই পোস্টে

৩) সিসিমপুর এর বইঃ সিসিমপুরের সাথে কাজ করা একটু কষ্ট আছে। কারন অনেক রুলস অ্যান্ড গাইডলাইন্স। আঁকার সময় অনেক কিছুই খেয়াল রাখতে হয়। বেশ কয়েকবার করে ফিডব্যাক আসে আর কারেকশন করতে হয়। কিন্তু কাজগুলি করে মজা পাই কারন সিসিমপুরের ক্যারেকটার গুলি আমার প্রিয়। বিশেষ করে ইকড়ি আর হালুম। গত বছর (২০১৮) কাজ করেছিলাম "আহমেদ খান হীরক" ভাইয়ের লেখায় "দম দম কল কল" বইটার। 

  
বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ এ। এর মাঝেই অংশগ্রহন করেছিলাম সিসিমপুরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্কশপে। ২০১৯ এ নতুন আরেকটি বইয়ে কাজ করেছি। এই বইয়ের লেখকও হীরক ভাই। এইবারের বইটাতে কাজ করে আগের বারের চেয়ে মজা পেয়েছি। গল্পও ভাল ছিল আর আঁকার স্কোপ ছিল। যদিওবা আমার প্রিয় কয়েকটা পাতার কম্পোজিশন নতুন করে করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে ভালই। সবকিছু ঠিক থাকলে বইটা প্রকাশিত হবে এই বছর। 

৪) বন্যা সতর্কতা কমিক্স + পুষ্টি কমিক্সঃ ২০১৯ এর মাঝামাঝি সময়ে মেহেদী ভাইয়ের সাথে মুসলিম এইডের জন্য করেছিলাম বন্যা সতর্কতা কমিক্সের কাজ। মূলত আমি টেকনিক্যাল ড্রয়িংগুলি করেছিলাম। আর শেষ দিকে এসে করেছি ব্র্যাক এর জন্য পুষ্টি কমিক্স। এই কমিক্সটির গল্প, ক্যারেকটার ডিজাইন আর থাম্বনেল মেহেদী ভাই করে দিয়েছিলেন। আর আমি বাকি কাজ (ইংকিং + কালারিং + কভার ফিনিশিং) নামিয়ে দিয়েছিলাম। এই প্রজেক্টে বই ছিল ছয়টা। বাকিগুলিতে কাজ করেছে সব্য, হাসিব ভাই, রাকিব রাজ্জাক, মাহির আর আসিফ ভাই।


৫) ফ্রিল্যান্স কাজ ঃ দেশি বিদেশি বেশ কিছু ফ্রিল্যান্স কাজ করেছি। আইকন ডিজাইন, ব্র্যান্ডিং, টি - শার্ট ডিজাইন, লোগো, বইয়ের কভার, কমিক্স, কার্টুন, ইলাস্ট্রেশন সহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির কাজ ছিল। উল্লেখযোগ্য ছিল আসিফ ভাইয়ের সাথে মিলে করা Super kidz নামের বিদেশি একটা কমিক্সের ইস্যুতে কাজ করা আর আমার বন্ধু রাতুলের ব্র্যান্ড Tell Us এর জন্য টিশার্ট ডিজাইন। আর কাজ করেছি কিশোর বাংলা আর কিশোর আলো ম্যাগাজিনের কয়েকটি সংখ্যায়। 

Tell Us এর জন্য করা প্রিয় একটা টিশার্ট ডিজাইন।


কিশোর বাংলার জন্য করা একটা ইলাস্ট্রেশন



৬) পার্সোনাল কাজঃ উনিশে আমার ব্যক্তিগত কাজের সংখ্যা কম। Its & Bits নামের একটা কমিক্স স্ট্রিপ করেছি কাজের ফাঁকে। এটা বেশ ভালভাবেই নিয়েছে ফ্যানবেস আর পরিচিতরা। আর এটা সেটা মিলিয়ে অল্প কিছু ছবি এঁকেছিলাম। কাজ করেছি লুঙ্গিম্যানের নেক্সট ইস্যুর গল্প নিয়ে। এই গল্পে আমি বেশ ভালই সময় দিয়েছিলাম। প্রথম ইস্যুর গল্প নিয়ে অনেকের অভিযোগ ছিল। অনেকেই বলেছে গল্পে লুঙ্গিম্যানের উপস্থিতি কম আর এন্ডিং তাড়াহুড়ো করে শেষ করা হয়েছে। আসলে ঘটনা সত্যা। আমি নিজেই এই বিষয়গুলি নিয়ে হ্যাপি না। তাই এবারের গল্পে বেশ সময় দিয়েছি। হেল্প করেছে সব্যসাচী আর মেহেদী ভাই। এখন আঁকার কাজ করছি। বইমেলার আগে কাজ শেষ করতে পারবো কিনা এ নিয়ে চিন্তায় আছি। প্রিয় কিছু কাজ তুলে রাখি এখানে।

চাচা চৌধুরী এর রোবট ভার্সন। সময় নিয়ে করা কাজ।


২০১৯ এর প্রিয় একটা মুভি ছিল Klaus. এই মুভির ফ্যান আর্ট।
কাজটি করে বেশ মজা পেয়েছি। 
Its & Bits : Exposure
এই স্ট্রিপটি আমার করা কাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার
হওয়া কাজ। আসলে ক্রিয়েটিভ সেক্টরের অনেকেই এটার
সাথে রিলেট করতে পেরেছিল। 

এইতো! এই ব্লগপোস্ট লেখার মুহূর্তে মাথায় যা এসেছে লিখে রাখলাম। পরে মনে পড়লে যোগ করে নেব।

এক্সিবিশন আর ওয়ার্কশপ অ্যাটেন্ডিংঃ
২০১৯ এ দুটা এক্সিবিশনে অংশগ্রহন করেছিলাম। প্রথমটি ছিল উন্মাদ এর। Unmad Mad Tribute cartoon Exhibiton নামের এই এক্সিবিশনে আমার একটা আর্টওয়ার্ক স্থান পেয়েছিল।

এটা ছিল আমার সাবমিশন।

 উন্মাদের ৩৪৭ সংখ্যায়(অক্টোবর, ২০১৯) কাজটা উন্মাদের কভার করে দিলেন
বস আহসান হাবীব। আমি বেশ সারপ্রাইজড হয়েছিলাম।

পরের এক্সিবিশন ছিল Bangladesh Cartoonist Association (BANCARAS) আয়োজিত বাৎসরিক কার্টুন এক্সিবিশন। এই বছরের থিম ছিল স্ক্রিন অ্যাডিকশন। প্রতি এক্সিবিশনে আমি একটা করেই ছবি দেই তাই ভাবলাম এইবার কয়েকটি করব। টোটাল ছবি এঁকেছিলাম চারটি। এর মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়েছিল দুইটি। 





রাঙামাটির সংগঠন "জীবন Skills Drops" এর আহ্বানে নভেম্বরে আমরা একটা ওয়ার্কশপ করিয়ে আসলাম ঢাকা কমিক্স থেকে। ছিলেন মেহেদী ভাই, মিতু আপু, আমি আর জুম কমিক্সের ক্রিয়েটর সব্যসাচী চাকমা। ভালই সাড়া পেয়েছিলাম ওখানে। ওয়ার্কশপের ফাঁকে একটা ছোটখাটো ট্যুরও হয়ে গেলো বন্ধু সম্রাট আর সব্যর কল্যাণে। 







২০১৯ এর পাওয়া না পাওয়াঃ  

১) SVS Learn এ বেশ কয়েকটা অনলাইন কোর্স করেছি। শেখার চেষ্টা করেছি রোবট অ্যান্ড মেকানিক্যাল জিনিসপত্র আঁকা, পার্সপেক্টিভ, ক্রিয়েটিভ কম্পোজিশন আর চিল্ড্রেন বুক ইলাস্ট্রেশন শেখার। 
২) নিজের আঁকার স্কিল মনে হয় একটু ভাল হয়েছে। 
৩) লুঙ্গিম্যানের দুইটা ইস্যু আঁকার ইচ্ছা ছিল কমপক্ষে। আঁকা হয়নি। এটা একটা আফসোস।


Mighty Punch Studios:  

নভেম্বরের মাঝামাঝি একদিন মাইটি পাঞ্চ স্টুডিওস এর ফেসবুক পেইজে দেখলাম স্টুডিওতে আর্টিস্ট নিচ্ছে। মাইটি পাঞ্চের সাথে আমি আগে কমিক্সের কাজ করেছি। গত কয়েক বছর ধরেই স্টুডিও এর কর্ণধার সামির ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ আছে। স্টুডিও এর আর্টিস্ট অ্যানিমেটরদের সাথেও যোগাযোগ আছে। আর আসিফ ভাই ওখানে কাজ করেন সেই সুবাধেও আসা যাওয়া হয়। সামির ভাইয়ের স্টোরি-টেলিং আর ব্যবহার বেশ ভাল্লাগে। আর উনি নিজেই কমিক্স, অ্যানিমেশন, মাঙ্গা, মুভি, টিভি সিরিজ এইসবের ব্যাপারে অনেক জানেন। তাই পোস্টটা দেখে আমি মেহেদী ভাইয়ের সাথে কথা বললাম আগে। এরপর আসিফ ভাইয়ের সাথে কথা বলে সামির ভাইকে আমার পোর্টফলিও মেইল করে দিলাম। এরপর সামির ভাইয়ের সাথে কথা বলে জানালাম যে আমি ইন্টেরেস্টেড। তিনি শুনে বললেন আরে বাহ আমি তো জানতামনা যে তুমি জব করবা। যাই হোক এরপর ডিসেম্বরের শুরু/নভেম্বরের শেষদিকে একদিন সামির ভাই নক দিলেন। উনার সাথে জব রিলেটেড বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার জন্য দুই তারিখে গেলাম অফিসে। কথাবার্তা শেষে পার্ট-টাইম চুক্তিতে (সপ্তাহে তিনদিন) জয়েন করলাম মাইটি পাঞ্চে। পরেরদিন রেস্ট নিয়ে ৪ তারিখ থেকে অফিস শুরু করলাম। 
যুগান্তর এর চাকরি ছাড়ার প্রায় দুই বছর পর আবার কোন একটা চাকরীতে জয়েন করলাম আমি। চাকরি করার ইচ্ছা আসলে ছিলনা। ফ্রিল্যান্স আর নিজের আইপি ডেভেলপ করার দিকেই মনোযোগ ছিল আমার। কিন্তু মাইটি পাঞ্চে জয়েন করার পেছনে কয়েকটি কারন ছিল।
১) এই স্টুডিওস এর কাজগুলি আমার পছন্দের। বিশেষ করে অ্যানিমেশনগুলি। 
২) স্টোরিটেলিং আর অ্যানিমেশন শেখা। অ্যানিমেশনের সাথে আসে স্টোরিবোর্ডিং আর ড্রয়িং। এসব ডেভেলপ করা। 
৩) আমার ড্রয়িং মেন্টরদের মধ্যে একজন আসিফ ভাই ও ওখানে পার্ট-টাইম আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেন। ওনার সাথে থেকে কাজ শেখা। 
৪) একটা রেগুলার রুটিনের অভ্যাস গ্রো করা। 
এইতো এগুলিই। অভিজ্ঞতা এখনো পর্যন্ত বেশ ভাল। একটা চ্যালেঞ্জ আছে কাজের মধ্যে। আর আসিফ ভাইয়ের কাছ থেকে + স্টুডিও এর অ্যানিমেটরদের কাছ থেকে টুকিটাকি টিপস আর শেখা তো আছেই। অফিসের সবাইই খুব ফ্রেন্ডলি আর হেল্পফুল। এক কথায় দারুন।






২০১৯ এর ক্যারিয়ার টাইমলাইনে আপাতত এগুলিই মনে আসছে। পরে আরো কিছু মনে পড়লে অ্যাড করে নেব। সব মিলিয়ে ভালই গেল বছরটা। দেখা যাক ২০২০ সাল কেমন যায় আমার জন্য। Happy new year. :)

No comments:

Post a Comment