হ্যালো ব্লগস্পট! অনেকদিন পর প্রায় দেড় বছর বাদের পোস্ট লিখছি এই ব্লগে। এখন ব্লগে আর কেন জানি আলসেমি করে লেখা হয়ে উঠেনা । এর মাঝে পেরিয়ে গেছে অনেক সময়, অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। আঁকাআঁকির নতুন ধারায় এসেছি মনে হয়। ইদানীং মেক আর টেক রিলেটেড জিনিসপত্র আঁকতে ভাল্লাগে খালি। এর মধ্যেই লুঙ্গিম্যান কমিক্সের ৩ নাম্বার কপি পাবলিশ হয়ে গেছে ঢাকা কমিক্স থেকে ২০২১ এর ম্যাড়ম্যাড়ে বইমেলায়। পৃথিবীর অন্যসব দেশের মতো ২০২০ এর মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশও কভিড মহামারীর কবলে পড়েছে। এখনো পর্যন্ত এই মহামারীর কাছে সবাই পর্যুদুস্থ। পারতপক্ষে বাইরে যেওনা, বাইরে গেলেও মাস্ক পরে সানগ্লাস পরে হাতে স্যানিটাইজারের বোতল নিয়ে যাও। কিছুক্ষণ পরপর হাতে স্প্রে করো, বাইরে থেকে এসে সব ধুয়ে দাও, স্নান করে জীবাণু ধুয়ে ফেলো, হাট ধোও কিছুক্ষণ পরপর, অফিসের কাজ বাসায় বসে করো, মীটিং, আড্ডা সব অনলাইনে হয়তো গুগল মিটে অথবা জুম মিটিঙয়ে সেরে নাও, বাজার করো অনলাইন শপ থেকে, ব্লা ব্লা ব্লা ...... এরকম সবকিছুই অনলাইনে। গত দেড়বছর ধরে এইই চলছে। ক্লান্তিকর আর একঘেয়ে রুটিন। আর ভাল লাগেনা। আবার মাঝেমাঝে ভাল লাগে। কভিডের দোহাই দিয়ে ঘরে বসে থাকা যায়। বের হতে হয়না। ঠিক কেমন যেন সব।
Monday, September 6, 2021
Thursday, March 19, 2020
Wednesday, January 1, 2020
যেমন গেলো ২০১৯!
গেল বছর ব্যস্ততার কারনে (পড়ুন আলসেমির কারনে) ব্লগপোস্ট লেখা হয়নি তেমন বলতে গেলে। সারা বছরে মিলিয়ে মোটে আটটি পোস্ট লিখেছি। এই বছর প্রতি মাসেই অন্তত একটা পোস্ট দেওয়ার চেষ্টা করবো বলে ভাবছি। ব্যক্তিগত ঘটন-অঘটন বাদ দিয়ে বলতে গেলে ২০১৯ আমার আর্টিস্টিক ক্যারিয়ারের জন্য ভালই গিয়েছে। সারা বছরই ব্যস্ততায় কেটেছে ক্লায়েন্ট/ফ্রিল্যান্স/কমার্শিয়াল প্রজেক্ট নিয়ে। নিজের জন্য কাজ করা হয়েছে কম।
ছোট বড় অনেক কমার্শিয়াল আর পার্সোনাল প্রজেক্টেই কাজ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কাজগুলির লিস্ট করে রাখা যাক একটা;
ছোট বড় অনেক কমার্শিয়াল আর পার্সোনাল প্রজেক্টেই কাজ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কাজগুলির লিস্ট করে রাখা যাক একটা;
১) নিজের সুপারহিরো কমিক্স লুঙ্গিম্যানঃ যদিওবা লুঙ্গিম্যান এর কাজ শুরু করেছিলাম ২০১৮ সাল থেকেই কিন্তু ২০১৯ সালেও করতে হয়েছে এই কাজ। ১৯ এর বইমেলায় ঢাকা কমিক্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে লুঙ্গিম্যান কমিক্সের প্রথম ইস্যু। এই কাজটা নিয়ে আমি হ্যাপি। মেহেদী ভাইকে ২০১৯ এ আরো কয়েকটা ইস্যু দেব বলেছিলাম যদিও কিন্তু কাজ করা আর হয়নি কমার্শিয়াল কাজের ব্যস্ততার চাপে। এই প্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে এই পোস্টে।
২) রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠ্যবইঃ মিতু আপু আর মেহেদী ভাইয়ের সুপারভিশনে কাজ করা এই প্রজেক্ট ছিল ২০১৯ এর সবচেয়ে বড় আর দীর্ঘস্থায়ী প্রজেক্ট। কক্সবাজার এডুকেশন নামের এও প্রজেক্টটা ছিল ইউনিসেফ এর। মিতু আপু আর মেহেদী ভাই কাজটা নিয়ে আমাদের নিয়ে একটা টীম করেছিলেন। টীমে ছিলেন মিতু আপু, মেহেদী ভাই, আসিফ ভাই, হাসিব ভাই, সব্যসাচী আর আমি। নিজেদের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি সারা বছরই আমরা এই প্রজেক্টে কাজ করেছি। হাজার হাজার ড্রয়িং করেছি সবাই মিলে। হ্যাঁ হাজার হাজার। :D
মেহেদী ভাই, আসিফ ভাই আর মিতু আপু অনেকগুলি বই। আর আমরা বাকিরা করেছিলাম ফ্ল্যাশকার্ড আর স্টুডেন্ট বুকের ইলাস্ট্রেশন। আমি কাজ শুরু করেছিলাম ১৯ এর মার্চ-এপ্রিলের দিকে। কয়েকশ ছবি এঁকেছিলাম এই কাজের জন্য আমি। আর নভেম্বরে এসে করেছিলাম স্টুডেন্ট বুক মেক-আপের কাজ। এই মেক-আপের কাজের জন্য নতুন করে ইন-ডিজাইন সফটওয়্যার এর কাজ শিখতে হয়েছিল আমাকে। ঢাকা কমিক্সের নতুন স্টুডিওতে গিয়ে গিয়ে মিতু আপুর কাছ থেকে কাজ শিখে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মেক-আপের কাজ নামিয়ে দিয়েছিলাম। আসলে এই কাজের জন্য আমরা সময় পেয়েছিলাম কম। প্রত্যেকবার নিজেদের ব্যাচে যা পড়েছিল তা সাবমিট করার জন্য টাইট ডেডলাইন থাকতো। এই সময়ের মধ্যেই আমরা কাজ নামিয়ে দিয়েছি। বেশ ভাল হয়েছে সবার কাজই। অনুমতি না থাকায় কোন কাজ এখনো শেয়ার করা যাচ্ছেনা তবে আশা করি ভবিষ্যতে শেয়ার করবো। এই প্রজেক্ট সম্পর্কে আরো জানা যাবে মেহেদী ভাইয়ের এই পোস্টে।
৩) সিসিমপুর এর বইঃ সিসিমপুরের সাথে কাজ করা একটু কষ্ট আছে। কারন অনেক রুলস অ্যান্ড গাইডলাইন্স। আঁকার সময় অনেক কিছুই খেয়াল রাখতে হয়। বেশ কয়েকবার করে ফিডব্যাক আসে আর কারেকশন করতে হয়। কিন্তু কাজগুলি করে মজা পাই কারন সিসিমপুরের ক্যারেকটার গুলি আমার প্রিয়। বিশেষ করে ইকড়ি আর হালুম। গত বছর (২০১৮) কাজ করেছিলাম "আহমেদ খান হীরক" ভাইয়ের লেখায় "দম দম কল কল" বইটার।
বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ এ। এর মাঝেই অংশগ্রহন করেছিলাম সিসিমপুরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্কশপে। ২০১৯ এ নতুন আরেকটি বইয়ে কাজ করেছি। এই বইয়ের লেখকও হীরক ভাই। এইবারের বইটাতে কাজ করে আগের বারের চেয়ে মজা পেয়েছি। গল্পও ভাল ছিল আর আঁকার স্কোপ ছিল। যদিওবা আমার প্রিয় কয়েকটা পাতার কম্পোজিশন নতুন করে করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে ভালই। সবকিছু ঠিক থাকলে বইটা প্রকাশিত হবে এই বছর।
৪) বন্যা সতর্কতা কমিক্স + পুষ্টি কমিক্সঃ ২০১৯ এর মাঝামাঝি সময়ে মেহেদী ভাইয়ের সাথে মুসলিম এইডের জন্য করেছিলাম বন্যা সতর্কতা কমিক্সের কাজ। মূলত আমি টেকনিক্যাল ড্রয়িংগুলি করেছিলাম। আর শেষ দিকে এসে করেছি ব্র্যাক এর জন্য পুষ্টি কমিক্স। এই কমিক্সটির গল্প, ক্যারেকটার ডিজাইন আর থাম্বনেল মেহেদী ভাই করে দিয়েছিলেন। আর আমি বাকি কাজ (ইংকিং + কালারিং + কভার ফিনিশিং) নামিয়ে দিয়েছিলাম। এই প্রজেক্টে বই ছিল ছয়টা। বাকিগুলিতে কাজ করেছে সব্য, হাসিব ভাই, রাকিব রাজ্জাক, মাহির আর আসিফ ভাই।
৫) ফ্রিল্যান্স কাজ ঃ দেশি বিদেশি বেশ কিছু ফ্রিল্যান্স কাজ করেছি। আইকন ডিজাইন, ব্র্যান্ডিং, টি - শার্ট ডিজাইন, লোগো, বইয়ের কভার, কমিক্স, কার্টুন, ইলাস্ট্রেশন সহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির কাজ ছিল। উল্লেখযোগ্য ছিল আসিফ ভাইয়ের সাথে মিলে করা Super kidz নামের বিদেশি একটা কমিক্সের ইস্যুতে কাজ করা আর আমার বন্ধু রাতুলের ব্র্যান্ড Tell Us এর জন্য টিশার্ট ডিজাইন। আর কাজ করেছি কিশোর বাংলা আর কিশোর আলো ম্যাগাজিনের কয়েকটি সংখ্যায়।
Tell Us এর জন্য করা প্রিয় একটা টিশার্ট ডিজাইন।
কিশোর বাংলার জন্য করা একটা ইলাস্ট্রেশন
৬) পার্সোনাল কাজঃ উনিশে আমার ব্যক্তিগত কাজের সংখ্যা কম। Its & Bits নামের একটা কমিক্স স্ট্রিপ করেছি কাজের ফাঁকে। এটা বেশ ভালভাবেই নিয়েছে ফ্যানবেস আর পরিচিতরা। আর এটা সেটা মিলিয়ে অল্প কিছু ছবি এঁকেছিলাম। কাজ করেছি লুঙ্গিম্যানের নেক্সট ইস্যুর গল্প নিয়ে। এই গল্পে আমি বেশ ভালই সময় দিয়েছিলাম। প্রথম ইস্যুর গল্প নিয়ে অনেকের অভিযোগ ছিল। অনেকেই বলেছে গল্পে লুঙ্গিম্যানের উপস্থিতি কম আর এন্ডিং তাড়াহুড়ো করে শেষ করা হয়েছে। আসলে ঘটনা সত্যা। আমি নিজেই এই বিষয়গুলি নিয়ে হ্যাপি না। তাই এবারের গল্পে বেশ সময় দিয়েছি। হেল্প করেছে সব্যসাচী আর মেহেদী ভাই। এখন আঁকার কাজ করছি। বইমেলার আগে কাজ শেষ করতে পারবো কিনা এ নিয়ে চিন্তায় আছি। প্রিয় কিছু কাজ তুলে রাখি এখানে।
চাচা চৌধুরী এর রোবট ভার্সন। সময় নিয়ে করা কাজ।
২০১৯ এর প্রিয় একটা মুভি ছিল Klaus. এই মুভির ফ্যান আর্ট।
কাজটি করে বেশ মজা পেয়েছি।
Its & Bits : Exposure
এই স্ট্রিপটি আমার করা কাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার
হওয়া কাজ। আসলে ক্রিয়েটিভ সেক্টরের অনেকেই এটার
সাথে রিলেট করতে পেরেছিল।
এইতো! এই ব্লগপোস্ট লেখার মুহূর্তে মাথায় যা এসেছে লিখে রাখলাম। পরে মনে পড়লে যোগ করে নেব।
এক্সিবিশন আর ওয়ার্কশপ অ্যাটেন্ডিংঃ
২০১৯ এ দুটা এক্সিবিশনে অংশগ্রহন করেছিলাম। প্রথমটি ছিল উন্মাদ এর। Unmad Mad Tribute cartoon Exhibiton নামের এই এক্সিবিশনে আমার একটা আর্টওয়ার্ক স্থান পেয়েছিল।
২০১৯ এ দুটা এক্সিবিশনে অংশগ্রহন করেছিলাম। প্রথমটি ছিল উন্মাদ এর। Unmad Mad Tribute cartoon Exhibiton নামের এই এক্সিবিশনে আমার একটা আর্টওয়ার্ক স্থান পেয়েছিল।
এটা ছিল আমার সাবমিশন।
উন্মাদের ৩৪৭ সংখ্যায়(অক্টোবর, ২০১৯) কাজটা উন্মাদের কভার করে দিলেন
বস আহসান হাবীব। আমি বেশ সারপ্রাইজড হয়েছিলাম।
পরের এক্সিবিশন ছিল Bangladesh Cartoonist Association (BANCARAS) আয়োজিত বাৎসরিক কার্টুন এক্সিবিশন। এই বছরের থিম ছিল স্ক্রিন অ্যাডিকশন। প্রতি এক্সিবিশনে আমি একটা করেই ছবি দেই তাই ভাবলাম এইবার কয়েকটি করব। টোটাল ছবি এঁকেছিলাম চারটি। এর মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়েছিল দুইটি।
রাঙামাটির সংগঠন "জীবন Skills Drops" এর আহ্বানে নভেম্বরে আমরা একটা ওয়ার্কশপ করিয়ে আসলাম ঢাকা কমিক্স থেকে। ছিলেন মেহেদী ভাই, মিতু আপু, আমি আর জুম কমিক্সের ক্রিয়েটর সব্যসাচী চাকমা। ভালই সাড়া পেয়েছিলাম ওখানে। ওয়ার্কশপের ফাঁকে একটা ছোটখাটো ট্যুরও হয়ে গেলো বন্ধু সম্রাট আর সব্যর কল্যাণে।
২০১৯ এর পাওয়া না পাওয়াঃ
১) SVS Learn এ বেশ কয়েকটা অনলাইন কোর্স করেছি। শেখার চেষ্টা করেছি রোবট অ্যান্ড মেকানিক্যাল জিনিসপত্র আঁকা, পার্সপেক্টিভ, ক্রিয়েটিভ কম্পোজিশন আর চিল্ড্রেন বুক ইলাস্ট্রেশন শেখার।
২) নিজের আঁকার স্কিল মনে হয় একটু ভাল হয়েছে।
৩) লুঙ্গিম্যানের দুইটা ইস্যু আঁকার ইচ্ছা ছিল কমপক্ষে। আঁকা হয়নি। এটা একটা আফসোস।
Mighty Punch Studios:
নভেম্বরের মাঝামাঝি একদিন মাইটি পাঞ্চ স্টুডিওস এর ফেসবুক পেইজে দেখলাম স্টুডিওতে আর্টিস্ট নিচ্ছে। মাইটি পাঞ্চের সাথে আমি আগে কমিক্সের কাজ করেছি। গত কয়েক বছর ধরেই স্টুডিও এর কর্ণধার সামির ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ আছে। স্টুডিও এর আর্টিস্ট অ্যানিমেটরদের সাথেও যোগাযোগ আছে। আর আসিফ ভাই ওখানে কাজ করেন সেই সুবাধেও আসা যাওয়া হয়। সামির ভাইয়ের স্টোরি-টেলিং আর ব্যবহার বেশ ভাল্লাগে। আর উনি নিজেই কমিক্স, অ্যানিমেশন, মাঙ্গা, মুভি, টিভি সিরিজ এইসবের ব্যাপারে অনেক জানেন। তাই পোস্টটা দেখে আমি মেহেদী ভাইয়ের সাথে কথা বললাম আগে। এরপর আসিফ ভাইয়ের সাথে কথা বলে সামির ভাইকে আমার পোর্টফলিও মেইল করে দিলাম। এরপর সামির ভাইয়ের সাথে কথা বলে জানালাম যে আমি ইন্টেরেস্টেড। তিনি শুনে বললেন আরে বাহ আমি তো জানতামনা যে তুমি জব করবা। যাই হোক এরপর ডিসেম্বরের শুরু/নভেম্বরের শেষদিকে একদিন সামির ভাই নক দিলেন। উনার সাথে জব রিলেটেড বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার জন্য দুই তারিখে গেলাম অফিসে। কথাবার্তা শেষে পার্ট-টাইম চুক্তিতে (সপ্তাহে তিনদিন) জয়েন করলাম মাইটি পাঞ্চে। পরেরদিন রেস্ট নিয়ে ৪ তারিখ থেকে অফিস শুরু করলাম।
যুগান্তর এর চাকরি ছাড়ার প্রায় দুই বছর পর আবার কোন একটা চাকরীতে জয়েন করলাম আমি। চাকরি করার ইচ্ছা আসলে ছিলনা। ফ্রিল্যান্স আর নিজের আইপি ডেভেলপ করার দিকেই মনোযোগ ছিল আমার। কিন্তু মাইটি পাঞ্চে জয়েন করার পেছনে কয়েকটি কারন ছিল।
১) এই স্টুডিওস এর কাজগুলি আমার পছন্দের। বিশেষ করে অ্যানিমেশনগুলি।
২) স্টোরিটেলিং আর অ্যানিমেশন শেখা। অ্যানিমেশনের সাথে আসে স্টোরিবোর্ডিং আর ড্রয়িং। এসব ডেভেলপ করা।
৩) আমার ড্রয়িং মেন্টরদের মধ্যে একজন আসিফ ভাই ও ওখানে পার্ট-টাইম আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেন। ওনার সাথে থেকে কাজ শেখা।
৪) একটা রেগুলার রুটিনের অভ্যাস গ্রো করা।
এইতো এগুলিই। অভিজ্ঞতা এখনো পর্যন্ত বেশ ভাল। একটা চ্যালেঞ্জ আছে কাজের মধ্যে। আর আসিফ ভাইয়ের কাছ থেকে + স্টুডিও এর অ্যানিমেটরদের কাছ থেকে টুকিটাকি টিপস আর শেখা তো আছেই। অফিসের সবাইই খুব ফ্রেন্ডলি আর হেল্পফুল। এক কথায় দারুন।
২০১৯ এর ক্যারিয়ার টাইমলাইনে আপাতত এগুলিই মনে আসছে। পরে আরো কিছু মনে পড়লে অ্যাড করে নেব। সব মিলিয়ে ভালই গেল বছরটা। দেখা যাক ২০২০ সাল কেমন যায় আমার জন্য। Happy new year. :)
Tuesday, August 27, 2019
Radio Dhol Limited Edition Show & DGcon 2019
রেডিও ঢোল
গত মাসের নয় তারিখে রেডিও ঢোল থেকে ডাক পেয়েছিলাম কায়সার কবির ভাইয়ের শো লিমিটেড এডিশনে আড্ডা মারার জন্য। গিয়ে আড্ডা মেরে এসেছিলাম কায়সার ভাইয়ের সাথে। কথা বলেছিলাম লুঙ্গিম্যান সহ আমার বিভিন্ন প্রজেক্ট আর প্রিয় কমিক্স+কমিক্স আর্টিস্টদের নিয়ে। দারুণ মজার মানুষ একটা এই কায়সার ভাই।
(রেডিও ঢোলের স্টুডিওতে। অনেক কষ্টে নিঃশ্বাস চেপে রেখে ভুরি লুকিয়েছিলাম। :3)
DGCon 2019
এই বছরের মার্চ মাসে মাইটি পাঞ্চ স্টুডিও এর সামির ভাই ডাক দিলেন মিস শাবাস এর তিন নাম্বার ইস্যুতে কাজ করার জন্য। পেন্সিলিং ছিল আসিফ ভাইয়ের তাই টুক করে রাজি হয়ে গেলাম। ২০ পেইজের এই কমিক্সে দশ পেইজের ইঙ্ক আর কালার করেছিলাম আমি। গল্পটা খুবি দারুণ আর ইন্টেরেস্টিং এই সংখ্যার। যার কারনে কাজ করে মজা পেয়েছিলাম। বইটা পাবলিশ হলো এপ্রিলে আর জুলাইয়ের ১৯ তারিখে হয়ে যাওয়া DGCon 2019 এ আপকামিং কমিক্স আর পাবলিশড কমিক্স নিয়ে মাইটি পাঞ্চের প্যানেল ডিসকাশন ছিল। সে কারনে সামির ভাই থাকতে বললেন প্যানেলে।
১৯ তারিখে গেলাম ভেন্যু যমুনা ফিউচার পার্কে। বেশ দারুণ লেগেছে অভিজ্ঞতাটা। কিছু ছবি তুলে রাখি ব্লগে।
জীবনের প্রথম কমিক্স প্যানেল ডিসকাশন। থ্যাংকস টু মাইটি পাঞ্চ স্টুডিও।
Unmad MAD Tribute Cartoon Exhibition 2019
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে লেজেন্ডারি MAD ম্যাগাজিন। এই লেজেন্ডারি ম্যাগাজিনের জন্য আমাদের দেশি লেজেন্ডারি স্যাটায়ার ম্যাগাজিন উন্মাদ আয়োজন করেছিল "Tribute to MAD কার্টুন প্রদর্শনী" শিরোনামে তিনদিনব্যাপী (২৩শে অগাস্ট - ২৫শে অগাস্ট) এক এক্সিবিশনের। দৃক গ্যালারিতে হয়ে যাওয়া এই এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন প্রফেশনাল থেকে শুরু করে বিগিনার পর্যন্ত বাংলাদেশি একঝাঁক নবীন প্রবীণ কার্টুনিস্ট আর ভিজুয়াল স্টোরিটেলারের দল। এক্সিবিশনের জন্য আর্টওয়ার্ক জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ৩০ শে জুলাই। আমি বাড়ি গিয়েছিলাম জুলাই মাসে যার কারনে আলসেমি করার রিস্ক নেইনি অন্যান্যবারের মত। বাড়ি যাওয়ার আগেই দুইদিন সময় নিয়ে অন্যান্য কাজের ফাঁকে এঁকে ফেললাম একটা ছবি। ইদানিং মাথায় রোবট আর মেকা ড্রয়িং এর ভুত চেপেছে। তাই ম্যাড ম্যাগাজিনের আইকনিক মাস্কট Alfred E. Neuman এর একটা ফিউচারিস্টিক রোবট ভার্শন এঁকে মেইল করে দিলাম বস আহসান হাবিবের মেইল অ্যাড্রেসে। একটাই কার্টুন পাঠিয়েছিলাম আমি আর ওটাই সিলেক্টেড হয়েছে অন্যান্য সব দারুণ কার্টুন আর আর্টওয়ার্কের মাঝে। কিছু ছবি তুলে রাখি ব্লগে।
Robot Alfred E. Neuman in 2077
(cyberpunk 2077 থেকে ইন্সপায়ার্ড)
আমার আঁকা কার্টুনের পাশে বস আহসান হাবিব
ছবিটি তুলেছে ইব্রাহিম সৈকত
এক্সিবিশনের ব্যানার
বাম থেকে বস, আমি আর নাঈম
মিতুপু, আমি আর নাঈম
গ্যালারির ভেতর গরমে হাঁসফাঁস লাগছিল। তাই চা খেতে
বের হওয়া সবাই মিলে। বাম থেকে জুম কমিক্সের ক্রিয়েটর
সব্যসাচী চাকমা, ইব্রাহীম কমিক্সের আর্টিস্ট অ্যাড্রিয়েন আর
ইব্রাহীম কমিক্সের ক্রিয়েটর তানজিম।
মেহেদী ভাই চা খায়।
অ্যাড্রিয়েন,আমি। সিধু আর সব্যসাচী
বজ্রমুষ্ঠি!
বাম থেকে অ্যাড্রিয়েন, সব্য, সিধু, হাসিব ভাই আর আমি।
লুঙ্গিম্যান কাহিনী
"তুফান নগর, মশায় মশাময়। সেই শহরের দুই মেয়র আছেন খালি ফাঁকা বুলি দিয়ে মিডিয়া কভারেজ নিতে। কাজের কাজ আর হচ্ছে না। মানুষজনের নাভিশ্বাস ওঠার দশা মশায়। নিত্যুনতুন তুঘলকী সব আইডিয়া বাতলে যাচ্ছেন দু'জনে, এমনকি চলে আসছে বেশ কিছু বিদেশী দাওয়াই। এদিকে তুফান নগরের একেবারে খাস দেশি লোকাল হিরো 'লুঙ্গিম্যান' যতই বলে যাচ্ছে যে সে চাইলে যে কোন সমস্যাকেই সমাধান করে দিতে পারে, কিন্তু তার 'ক্ষ্যাত' গেট আপের কারণে কেউ তাকে পাত্তা দিচ্ছে না, কিন্তু অদিকে দুই মেয়রের আইডিয়া এতই ভয়াবহ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন যে শেষমেশ- নাহ শেষমেশ কী হয় সেটা দেখতে ত আসলে বইটা পড়তে হবে, আর সময় কাটাতে হবে আমাদের লুঙ্গিম্যানের সাথে।"
রকমারি ডট কমে আমার কমিক্স লুঙ্গিম্যান এর প্রথম সংখ্যার কাহিনী সংক্ষেপটা এভাবেই দেওয়া আছে। লুঙ্গিম্যান কে নিয়ে আমার মাথায় প্রথম র্যানডম একটা ভাবনা আসে ২০১৪ তে। সে সময় প্র্যাকটিস পারপাসেই আমি একটা রাফ ক্যারেক্টার এঁকে ফেলি যার পরনে ছিল লুঙ্গি। নাম দিলাম পালোয়ান। সেটা আমার এই ব্লগের এক পোস্টে আর Pinterest অ্যাকাউন্টে পোস্ট করার সময় ক্যাপশনে পালোয়ান লিখতে গিয়েও লিখলাম না। মাথায় এলো পিন্টারেস্ট এ বিদেশিরা পোস্ট দেখে। পালোয়ান কি চিনবেনা। তার চেয়ে বরং Lungi Man লিখি। লিখে নিচে লুঙ্গি কি জিনিস সেটার একটা ছোট বিবরন দিয়ে দিলাম আর ভাবলাম বাহ একটা হিরো হয়ে গেলো দেখি। লুঙ্গি ম্যান :D
এরপর পড়ালেখার ব্যস্ততার কারণে আর ক্যারেক্টারটা নিয়ে কাজ করা হয়নি। আর পড়ালেখা শেষ করার পর নতুন ক্যারিয়ার গুছানোর ব্যস্ততার কারণে পার্সোনাল কোন কাজই ধরতে গেলে করতে পারিনি। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে লুঙ্গি ব্যাপারটা আমার মাথাতে অবশ্য ছিল। যে কারনে আমি ব্যাটম্যান, ডেডপুল, মিনিয়ন, টুজকি, ঢাকা কমিক্সের ক্যারেক্টার রিশাদ কে লুঙ্গি পরিয়ে ফ্যান আর্ট করেছিলাম। :D
আর মাঝে মাঝে নিজের বেশ কিছু ক্যারেক্টারকে নিয়ে কাজ করার কথা ভেবেছি। বাবলু ভাইকে ফোর্স করে তার কাছ থেকে সাইন্স ফিকশন এর প্লট নিয়েছি, লুঙ্গিম্যান কে নিয়ে ভেবেছি, দাদু দিদিমাদের কাছে শোনা গল্প থেকে কোন কমিক্স অ্যাডাপ্ট করা যায় কিনা ভেবেছি। এরকম আরো অনেক পার্সোনাল প্রজেক্ট নিয়েই ভেবেছি। কিন্তু ঘুরেফিরে সেই একই চক্র যেটা অনেক আর্টিস্ট ফেস করেন ক্যারিয়ার লাইফে। সারভাইভ করার জন্য আর ক্যারিয়ারের জন্য ক্লায়েন্টদের হয়ে কাজ করতে করতে আর নিজের প্রজেক্ট নিয়েই কাজ করা হয়ে উঠেনা আমাদের।
২০১৭ এর শেষের দিক থেকে মাথায় আবার লুঙ্গিম্যান ভর করে কিন্তু ব্যস্ততার মাঝে হাত দেওয়া হয়নি। ২০১৮ এর শুরুতে এসে দেখলাম আমার ২০১৪ এর লুঙ্গিম্যান এর ডিজাইন দিয়ে ইন্ডিয়ান এক স্টুডিও টয় বের করে ফেলেছে আর ব্যবসা ফেঁদেছে। দেখে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। বইমেলায় যাচ্ছিলাম একদিন মেহেদী ভাইয়ের সাথে। তখন শেয়ার করলাম এই ঘটনা। শুনে মেহেদী ভাই বললেন আরে কমিক্স করে ফেলো। তখন বেশ সিরিয়াস হয়েই আসিফ ভাইয়ের সাথে আলাপ আলোচনা করে বুদ্ধিশুদ্ধি নিয়ে লুঙ্গিম্যানের ক্যারেক্টার টা দাঁড় করিয়ে ফেললাম। কি হতে পারে তার কাজ, কি হতে পারে তার সুপারপাওয়ার এসব। আর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম এইবার নিজের এই প্রজেক্ট দাঁড় করাবোই। কোন এক্সকিউজ দেখাবোনা নিজেকে। সে সিদ্ধান্তকে সিরিয়াস করার জন্য Colors FM এর তাহসীন সালমান ভাইয়ের কমিকবাজ প্রোগ্রামে লুঙ্গিম্যানের কথা বলে ফেললাম মার্চেই।
তাহসীন ভাইও শুনে বেশ উতসাহ দিলেন। বললেন আরে করে ফেলো। দারুন হবে। শুরু করে দিলাম কাজ। ক্লায়েন্টদের কাজের ফাঁকেই ঢাকা কমিক্স স্টুডিওতে গিয়ে মেহেদী ভাইয়ের সাথে বসে বসে লুঙ্গিম্যানের অরিজিন স্টোরি, প্রথম ইস্যু এর প্লট রেডি করলাম, ক্যারেক্টার ডিজাইন করলাম বেশ কয়েক ধাপে। গল্পের ভিলেন আর অন্যান্য ক্যারেক্টারগুলির ডিজাইন, কমিক্সের পেজের রাফ করে ফেললাম। এর মাঝে বেশ কবার লুঙ্গিম্যানের ক্যারেক্টার চেঞ্জ করেছি আমি। যাই করি পছন্দ হয়না নিজের। আবার কনফিউশনও ছিল অনেক।
এর মাঝে অন্য কমিক্স নিয়ে কাজ করেছি যার কারনে লুঙ্গিম্যান এর প্রজেক্ট আবার স্থগিত রাখা হলো। এর মধ্যে চলে এলো অক্টোবর মাস। আর্টিস্টদের সেলফ চ্যালেঞ্জ ইভেন্ট Inktober এ আবার লুঙ্গি ম্যানকে নিয়ে কাজ শুরু করবো সিদ্ধান্ত নিলাম। এবং অক্টোবরের শুরু থেকেই বিভিন্ন কনসেপ্ট আর পোজ আঁকা শুরু করলাম।
এঁকে ফেসবুকে পোস্ট করা শুরু করার পর টের পেলাম লুঙ্গি ম্যানকে অনেকে পছন্দ করছে। সরাসরি, টেক্সটে, কমেন্টে অনেকে উতসাহ দিলেন। অনেক সিনিয়র আর ফেলো আর্টিস্ট বললেন কাজটা ভাল হচ্ছে। আমার গুরু মেহেদী ভাই, আসিফ ভাই, বন্ধু অ্যাড্রিয়েন সহ অনেকের কাছ থেকে ফ্যান আর্ট পেলাম।
আর আমি আরো উতসাহ পেয়ে গেলাম। যে কনফিউশনটা ছিল সেটা দূর হয়ে গেলো আমার। সবচেয়ে বেশি উতসাহ পেলাম বাতিঘরে অনুষ্ঠিত হওয়া Dhaka Comics এর প্রথম আড্ডায়। লুঙ্গি ম্যানকে নিয়ে যখন কথা বলছিলাম তখন সরাসরিই ঢাকা কমিক্সের পাঠকদের রেসপন্স পেলাম। কথা দিয়ে আসলাম সবার সামনে। এর মাঝে লুঙ্গিম্যানকে নিয়ে হালকা পাতলা জটিলতাও হলো! বস আহসান হাবিব এর হস্তক্ষেপে সে জটিলতার সমাধান শেষে আর কোন বাধা রইলোনা। এরপর টানা দুই তিন মাস কাজ করে লুঙ্গিম্যানের প্রথম ইস্যুর কাজ শেষ করলাম ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে। আর সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঢাকা কমিক্স এহেকে লুঙ্গিম্যান পাবলিশ হলো ১৫ তারিখে।
সব মিলিয়ে বেশ ভালই সাড়া পেয়েছি রিডারদের কাছ থেকে। স্টোরিটেলিংয়ে গড়বর ছিল আমার। প্রথম ইস্যুতে লুঙ্গিম্যান এর উপস্থিতি কম ছিল বলে অনেকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি যার কারনে নেক্সট ইস্যুর স্টোরির জন্য অনেক ভেবেছি আর সময় দিয়েছি। এই মুহূর্তে কাজ চলছে লুঙ্গিম্যান এর দ্বিতীয় ইস্যুর। আশা করি আগের চাইতে ভাল কাজ করতে পারবো।
বইমেলার সময় অনিক ভাই এসে একটা ইন্টার্ভিউও নিয়েছিলেন আমার। বাই দ্যা উয়ে অনিক ভাইয়ের একটা স্ক্রিপ্টেও দেশি বেশ কয়েকজন সুপারহিরো ছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিল লুঙ্গিম্যান। :D
ইন্টার্ভিউটি দেখতে চাইলে ক্লিক করুন এই লিংকে আর লুঙ্গিম্যান এর প্রথম ইস্যু কিনতে চাইলে ক্লিক করুন এই লিংকে।
রকমারি ডট কমে আমার কমিক্স লুঙ্গিম্যান এর প্রথম সংখ্যার কাহিনী সংক্ষেপটা এভাবেই দেওয়া আছে। লুঙ্গিম্যান কে নিয়ে আমার মাথায় প্রথম র্যানডম একটা ভাবনা আসে ২০১৪ তে। সে সময় প্র্যাকটিস পারপাসেই আমি একটা রাফ ক্যারেক্টার এঁকে ফেলি যার পরনে ছিল লুঙ্গি। নাম দিলাম পালোয়ান। সেটা আমার এই ব্লগের এক পোস্টে আর Pinterest অ্যাকাউন্টে পোস্ট করার সময় ক্যাপশনে পালোয়ান লিখতে গিয়েও লিখলাম না। মাথায় এলো পিন্টারেস্ট এ বিদেশিরা পোস্ট দেখে। পালোয়ান কি চিনবেনা। তার চেয়ে বরং Lungi Man লিখি। লিখে নিচে লুঙ্গি কি জিনিস সেটার একটা ছোট বিবরন দিয়ে দিলাম আর ভাবলাম বাহ একটা হিরো হয়ে গেলো দেখি। লুঙ্গি ম্যান :D
(প্রথম লুঙ্গিম্যান। এই লুঙ্গিম্যান অনেক আগেই (২০১৪ তে) Blog আর Pinterest এ পোস্ট করেছিলাম।যার কারনে গুগলে লুঙ্গি ম্যান লিখে সার্চ দিলেই এই কার্টুনটা চলে আসে।)
এরপর পড়ালেখার ব্যস্ততার কারণে আর ক্যারেক্টারটা নিয়ে কাজ করা হয়নি। আর পড়ালেখা শেষ করার পর নতুন ক্যারিয়ার গুছানোর ব্যস্ততার কারণে পার্সোনাল কোন কাজই ধরতে গেলে করতে পারিনি। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে লুঙ্গি ব্যাপারটা আমার মাথাতে অবশ্য ছিল। যে কারনে আমি ব্যাটম্যান, ডেডপুল, মিনিয়ন, টুজকি, ঢাকা কমিক্সের ক্যারেক্টার রিশাদ কে লুঙ্গি পরিয়ে ফ্যান আর্ট করেছিলাম। :D
আর মাঝে মাঝে নিজের বেশ কিছু ক্যারেক্টারকে নিয়ে কাজ করার কথা ভেবেছি। বাবলু ভাইকে ফোর্স করে তার কাছ থেকে সাইন্স ফিকশন এর প্লট নিয়েছি, লুঙ্গিম্যান কে নিয়ে ভেবেছি, দাদু দিদিমাদের কাছে শোনা গল্প থেকে কোন কমিক্স অ্যাডাপ্ট করা যায় কিনা ভেবেছি। এরকম আরো অনেক পার্সোনাল প্রজেক্ট নিয়েই ভেবেছি। কিন্তু ঘুরেফিরে সেই একই চক্র যেটা অনেক আর্টিস্ট ফেস করেন ক্যারিয়ার লাইফে। সারভাইভ করার জন্য আর ক্যারিয়ারের জন্য ক্লায়েন্টদের হয়ে কাজ করতে করতে আর নিজের প্রজেক্ট নিয়েই কাজ করা হয়ে উঠেনা আমাদের।
২০১৭ এর শেষের দিক থেকে মাথায় আবার লুঙ্গিম্যান ভর করে কিন্তু ব্যস্ততার মাঝে হাত দেওয়া হয়নি। ২০১৮ এর শুরুতে এসে দেখলাম আমার ২০১৪ এর লুঙ্গিম্যান এর ডিজাইন দিয়ে ইন্ডিয়ান এক স্টুডিও টয় বের করে ফেলেছে আর ব্যবসা ফেঁদেছে। দেখে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। বইমেলায় যাচ্ছিলাম একদিন মেহেদী ভাইয়ের সাথে। তখন শেয়ার করলাম এই ঘটনা। শুনে মেহেদী ভাই বললেন আরে কমিক্স করে ফেলো। তখন বেশ সিরিয়াস হয়েই আসিফ ভাইয়ের সাথে আলাপ আলোচনা করে বুদ্ধিশুদ্ধি নিয়ে লুঙ্গিম্যানের ক্যারেক্টার টা দাঁড় করিয়ে ফেললাম। কি হতে পারে তার কাজ, কি হতে পারে তার সুপারপাওয়ার এসব। আর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম এইবার নিজের এই প্রজেক্ট দাঁড় করাবোই। কোন এক্সকিউজ দেখাবোনা নিজেকে। সে সিদ্ধান্তকে সিরিয়াস করার জন্য Colors FM এর তাহসীন সালমান ভাইয়ের কমিকবাজ প্রোগ্রামে লুঙ্গিম্যানের কথা বলে ফেললাম মার্চেই।
(কালারস এফ এম এর কমিকবাজ তাহসীন ভাইয়ের সাথে।
জীবনের প্রথম রেডিও শো।)
তাহসীন ভাইও শুনে বেশ উতসাহ দিলেন। বললেন আরে করে ফেলো। দারুন হবে। শুরু করে দিলাম কাজ। ক্লায়েন্টদের কাজের ফাঁকেই ঢাকা কমিক্স স্টুডিওতে গিয়ে মেহেদী ভাইয়ের সাথে বসে বসে লুঙ্গিম্যানের অরিজিন স্টোরি, প্রথম ইস্যু এর প্লট রেডি করলাম, ক্যারেক্টার ডিজাইন করলাম বেশ কয়েক ধাপে। গল্পের ভিলেন আর অন্যান্য ক্যারেক্টারগুলির ডিজাইন, কমিক্সের পেজের রাফ করে ফেললাম। এর মাঝে বেশ কবার লুঙ্গিম্যানের ক্যারেক্টার চেঞ্জ করেছি আমি। যাই করি পছন্দ হয়না নিজের। আবার কনফিউশনও ছিল অনেক।
(লুঙ্গিম্যান চরিত্রের প্রাথমিক কিছু ডিজাইন। শেষের ডিজাইনটি ফাইনাল করেছিলাম মেহেদী ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে।)
লুঙ্গিম্যানের ফাইনাল Turn-Around শিট
পূর্ব তুফাননগরের মেয়র চিকনগুনি
পশ্চিম তুফাননগরের মেয়র মোটাগুনি
ক্যারেক্টার প্রপোরশন শিট
এর মাঝে অন্য কমিক্স নিয়ে কাজ করেছি যার কারনে লুঙ্গিম্যান এর প্রজেক্ট আবার স্থগিত রাখা হলো। এর মধ্যে চলে এলো অক্টোবর মাস। আর্টিস্টদের সেলফ চ্যালেঞ্জ ইভেন্ট Inktober এ আবার লুঙ্গি ম্যানকে নিয়ে কাজ শুরু করবো সিদ্ধান্ত নিলাম। এবং অক্টোবরের শুরু থেকেই বিভিন্ন কনসেপ্ট আর পোজ আঁকা শুরু করলাম।
Inktober #1
Inktober #2
Inktober #7
এঁকে ফেসবুকে পোস্ট করা শুরু করার পর টের পেলাম লুঙ্গি ম্যানকে অনেকে পছন্দ করছে। সরাসরি, টেক্সটে, কমেন্টে অনেকে উতসাহ দিলেন। অনেক সিনিয়র আর ফেলো আর্টিস্ট বললেন কাজটা ভাল হচ্ছে। আমার গুরু মেহেদী ভাই, আসিফ ভাই, বন্ধু অ্যাড্রিয়েন সহ অনেকের কাছ থেকে ফ্যান আর্ট পেলাম।
মেহেদী ভাইয়ের ফ্যান আর্ট
আসিফ ভাইয়ের ফ্যান আর্ট
আরহাম হাবিব এর ফ্যান আর্ট
তীর্থ ভাইয়ের ফ্যান আর্ট
দেবাদৃতা পিউ' এর ফ্যান আর্ট
বন্ধু অ্যাড্রিয়েনের ফ্যান আর্ট
আর আমি আরো উতসাহ পেয়ে গেলাম। যে কনফিউশনটা ছিল সেটা দূর হয়ে গেলো আমার। সবচেয়ে বেশি উতসাহ পেলাম বাতিঘরে অনুষ্ঠিত হওয়া Dhaka Comics এর প্রথম আড্ডায়। লুঙ্গি ম্যানকে নিয়ে যখন কথা বলছিলাম তখন সরাসরিই ঢাকা কমিক্সের পাঠকদের রেসপন্স পেলাম। কথা দিয়ে আসলাম সবার সামনে। এর মাঝে লুঙ্গিম্যানকে নিয়ে হালকা পাতলা জটিলতাও হলো! বস আহসান হাবিব এর হস্তক্ষেপে সে জটিলতার সমাধান শেষে আর কোন বাধা রইলোনা। এরপর টানা দুই তিন মাস কাজ করে লুঙ্গিম্যানের প্রথম ইস্যুর কাজ শেষ করলাম ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে। আর সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঢাকা কমিক্স এহেকে লুঙ্গিম্যান পাবলিশ হলো ১৫ তারিখে।
বস মনে কিছু একটা বলেছিলেন। সবাই কেলাচ্ছিলাম খুব।
ফেব্রুয়ারির ১৭ তারিখে বস আহসান হাবীব, মেহেদী ভাই, আসিফ ভাই, সব্যসাচী সহ আরো অনেকের উপস্থিতিতে ঢাকা কমিক্সের স্টলের সামনে লুঙ্গিম্যান প্রথম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হলো। মনে রাখার মতো একটা ঘটনা এটা আমার জীবনে। বইমেলার মাঝেই লুঙ্গিম্যান ফ্যান আর্ট প্রতিযোগিতা হয়েছিল। ওইদিনই বিকেলে ফ্যান আর্ট প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার হিসেবে কমিক্সের কপি আর লুঙ্গি, গামছা উপহার দেওয়া হলো। :D
বাম থেকে মেহেদী ভাই, দ্বিতীয় প্রতিযোগী সর্নাব, আমি, প্রথম প্রতিযোগী আপন আর তৃতীয় প্রতিযোগী সিফাত।
সব মিলিয়ে বেশ ভালই সাড়া পেয়েছি রিডারদের কাছ থেকে। স্টোরিটেলিংয়ে গড়বর ছিল আমার। প্রথম ইস্যুতে লুঙ্গিম্যান এর উপস্থিতি কম ছিল বলে অনেকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি যার কারনে নেক্সট ইস্যুর স্টোরির জন্য অনেক ভেবেছি আর সময় দিয়েছি। এই মুহূর্তে কাজ চলছে লুঙ্গিম্যান এর দ্বিতীয় ইস্যুর। আশা করি আগের চাইতে ভাল কাজ করতে পারবো।
বইমেলার সময় অনিক ভাই এসে একটা ইন্টার্ভিউও নিয়েছিলেন আমার। বাই দ্যা উয়ে অনিক ভাইয়ের একটা স্ক্রিপ্টেও দেশি বেশ কয়েকজন সুপারহিরো ছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিল লুঙ্গিম্যান। :D
ইন্টার্ভিউটি দেখতে চাইলে ক্লিক করুন এই লিংকে আর লুঙ্গিম্যান এর প্রথম ইস্যু কিনতে চাইলে ক্লিক করুন এই লিংকে।
Subscribe to:
Posts (Atom)