গত মাসের নয় তারিখে রেডিও ঢোল থেকে ডাক পেয়েছিলাম কায়সার কবির ভাইয়ের শো লিমিটেড এডিশনে আড্ডা মারার জন্য। গিয়ে আড্ডা মেরে এসেছিলাম কায়সার ভাইয়ের সাথে। কথা বলেছিলাম লুঙ্গিম্যান সহ আমার বিভিন্ন প্রজেক্ট আর প্রিয় কমিক্স+কমিক্স আর্টিস্টদের নিয়ে। দারুণ মজার মানুষ একটা এই কায়সার ভাই।
(রেডিও ঢোলের স্টুডিওতে। অনেক কষ্টে নিঃশ্বাস চেপে রেখে ভুরি লুকিয়েছিলাম। :3)
DGCon 2019
এই বছরের মার্চ মাসে মাইটি পাঞ্চ স্টুডিও এর সামির ভাই ডাক দিলেন মিস শাবাস এর তিন নাম্বার ইস্যুতে কাজ করার জন্য। পেন্সিলিং ছিল আসিফ ভাইয়ের তাই টুক করে রাজি হয়ে গেলাম। ২০ পেইজের এই কমিক্সে দশ পেইজের ইঙ্ক আর কালার করেছিলাম আমি। গল্পটা খুবি দারুণ আর ইন্টেরেস্টিং এই সংখ্যার। যার কারনে কাজ করে মজা পেয়েছিলাম। বইটা পাবলিশ হলো এপ্রিলে আর জুলাইয়ের ১৯ তারিখে হয়ে যাওয়া DGCon 2019 এ আপকামিং কমিক্স আর পাবলিশড কমিক্স নিয়ে মাইটি পাঞ্চের প্যানেল ডিসকাশন ছিল। সে কারনে সামির ভাই থাকতে বললেন প্যানেলে।
১৯ তারিখে গেলাম ভেন্যু যমুনা ফিউচার পার্কে। বেশ দারুণ লেগেছে অভিজ্ঞতাটা। কিছু ছবি তুলে রাখি ব্লগে।
জীবনের প্রথম কমিক্স প্যানেল ডিসকাশন। থ্যাংকস টু মাইটি পাঞ্চ স্টুডিও।
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে লেজেন্ডারি MAD ম্যাগাজিন। এই লেজেন্ডারি ম্যাগাজিনের জন্য আমাদের দেশি লেজেন্ডারি স্যাটায়ার ম্যাগাজিন উন্মাদ আয়োজন করেছিল "Tribute to MAD কার্টুন প্রদর্শনী" শিরোনামে তিনদিনব্যাপী (২৩শে অগাস্ট - ২৫শে অগাস্ট) এক এক্সিবিশনের। দৃক গ্যালারিতে হয়ে যাওয়া এই এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন প্রফেশনাল থেকে শুরু করে বিগিনার পর্যন্ত বাংলাদেশি একঝাঁক নবীন প্রবীণ কার্টুনিস্ট আর ভিজুয়াল স্টোরিটেলারের দল। এক্সিবিশনের জন্য আর্টওয়ার্ক জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ৩০ শে জুলাই। আমি বাড়ি গিয়েছিলাম জুলাই মাসে যার কারনে আলসেমি করার রিস্ক নেইনি অন্যান্যবারের মত। বাড়ি যাওয়ার আগেই দুইদিন সময় নিয়ে অন্যান্য কাজের ফাঁকে এঁকে ফেললাম একটা ছবি। ইদানিং মাথায় রোবট আর মেকা ড্রয়িং এর ভুত চেপেছে। তাই ম্যাড ম্যাগাজিনের আইকনিক মাস্কট Alfred E. Neuman এর একটা ফিউচারিস্টিক রোবট ভার্শন এঁকে মেইল করে দিলাম বস আহসান হাবিবের মেইল অ্যাড্রেসে। একটাই কার্টুন পাঠিয়েছিলাম আমি আর ওটাই সিলেক্টেড হয়েছে অন্যান্য সব দারুণ কার্টুন আর আর্টওয়ার্কের মাঝে। কিছু ছবি তুলে রাখি ব্লগে।
Robot Alfred E. Neuman in 2077
(cyberpunk 2077 থেকে ইন্সপায়ার্ড)
আমার আঁকা কার্টুনের পাশে বস আহসান হাবিব
ছবিটি তুলেছে ইব্রাহিম সৈকত
এক্সিবিশনের ব্যানার
বাম থেকে বস, আমি আর নাঈম
মিতুপু, আমি আর নাঈম
গ্যালারির ভেতর গরমে হাঁসফাঁস লাগছিল। তাই চা খেতে
বের হওয়া সবাই মিলে। বাম থেকে জুম কমিক্সের ক্রিয়েটর
সব্যসাচী চাকমা, ইব্রাহীম কমিক্সের আর্টিস্ট অ্যাড্রিয়েন আর
ইব্রাহীম কমিক্সের ক্রিয়েটর তানজিম।
মেহেদী ভাই চা খায়।
অ্যাড্রিয়েন,আমি। সিধু আর সব্যসাচী
বজ্রমুষ্ঠি!
বাম থেকে অ্যাড্রিয়েন, সব্য, সিধু, হাসিব ভাই আর আমি।
"তুফান নগর, মশায় মশাময়। সেই শহরের দুই মেয়র আছেন খালি ফাঁকা বুলি দিয়ে মিডিয়া কভারেজ নিতে। কাজের কাজ আর হচ্ছে না। মানুষজনের নাভিশ্বাস ওঠার দশা মশায়। নিত্যুনতুন তুঘলকী সব আইডিয়া বাতলে যাচ্ছেন দু'জনে, এমনকি চলে আসছে বেশ কিছু বিদেশী দাওয়াই। এদিকে তুফান নগরের একেবারে খাস দেশি লোকাল হিরো 'লুঙ্গিম্যান' যতই বলে যাচ্ছে যে সে চাইলে যে কোন সমস্যাকেই সমাধান করে দিতে পারে, কিন্তু তার 'ক্ষ্যাত' গেট আপের কারণে কেউ তাকে পাত্তা দিচ্ছে না, কিন্তু অদিকে দুই মেয়রের আইডিয়া এতই ভয়াবহ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন যে শেষমেশ- নাহ শেষমেশ কী হয় সেটা দেখতে ত আসলে বইটা পড়তে হবে, আর সময় কাটাতে হবে আমাদের লুঙ্গিম্যানের সাথে।" রকমারি ডট কমে আমার কমিক্স লুঙ্গিম্যান এর প্রথম সংখ্যার কাহিনী সংক্ষেপটা এভাবেই দেওয়া আছে। লুঙ্গিম্যান কে নিয়ে আমার মাথায় প্রথম র্যানডম একটা ভাবনা আসে ২০১৪ তে। সে সময় প্র্যাকটিস পারপাসেই আমি একটা রাফ ক্যারেক্টার এঁকে ফেলি যার পরনে ছিল লুঙ্গি। নাম দিলাম পালোয়ান। সেটা আমার এই ব্লগের এক পোস্টে আর Pinterest অ্যাকাউন্টে পোস্ট করার সময় ক্যাপশনে পালোয়ান লিখতে গিয়েও লিখলাম না। মাথায় এলো পিন্টারেস্ট এ বিদেশিরা পোস্ট দেখে। পালোয়ান কি চিনবেনা। তার চেয়ে বরং Lungi Man লিখি। লিখে নিচে লুঙ্গি কি জিনিস সেটার একটা ছোট বিবরন দিয়ে দিলাম আর ভাবলাম বাহ একটা হিরো হয়ে গেলো দেখি। লুঙ্গি ম্যান :D
(প্রথম লুঙ্গিম্যান। এই লুঙ্গিম্যান অনেক আগেই (২০১৪ তে) Blog আর Pinterest এ পোস্ট করেছিলাম।যার কারনে গুগলে লুঙ্গি ম্যান লিখে সার্চ দিলেই এই কার্টুনটা চলে আসে।)
এরপর পড়ালেখার ব্যস্ততার কারণে আর ক্যারেক্টারটা নিয়ে কাজ করা হয়নি। আর পড়ালেখা শেষ করার পর নতুন ক্যারিয়ার গুছানোর ব্যস্ততার কারণে পার্সোনাল কোন কাজই ধরতে গেলে করতে পারিনি। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে লুঙ্গি ব্যাপারটা আমার মাথাতে অবশ্য ছিল। যে কারনে আমি ব্যাটম্যান, ডেডপুল, মিনিয়ন, টুজকি, ঢাকা কমিক্সের ক্যারেক্টার রিশাদ কে লুঙ্গি পরিয়ে ফ্যান আর্ট করেছিলাম। :D আর মাঝে মাঝে নিজের বেশ কিছু ক্যারেক্টারকে নিয়ে কাজ করার কথা ভেবেছি। বাবলু ভাইকে ফোর্স করে তার কাছ থেকে সাইন্স ফিকশন এর প্লট নিয়েছি, লুঙ্গিম্যান কে নিয়ে ভেবেছি, দাদু দিদিমাদের কাছে শোনা গল্প থেকে কোন কমিক্স অ্যাডাপ্ট করা যায় কিনা ভেবেছি। এরকম আরো অনেক পার্সোনাল প্রজেক্ট নিয়েই ভেবেছি। কিন্তু ঘুরেফিরে সেই একই চক্র যেটা অনেক আর্টিস্ট ফেস করেন ক্যারিয়ার লাইফে। সারভাইভ করার জন্য আর ক্যারিয়ারের জন্য ক্লায়েন্টদের হয়ে কাজ করতে করতে আর নিজের প্রজেক্ট নিয়েই কাজ করা হয়ে উঠেনা আমাদের।
২০১৭ এর শেষের দিক থেকে মাথায় আবার লুঙ্গিম্যান ভর করে কিন্তু ব্যস্ততার মাঝে হাত দেওয়া হয়নি। ২০১৮ এর শুরুতে এসে দেখলাম আমার ২০১৪ এর লুঙ্গিম্যান এর ডিজাইন দিয়ে ইন্ডিয়ান এক স্টুডিও টয় বের করে ফেলেছে আর ব্যবসা ফেঁদেছে। দেখে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। বইমেলায় যাচ্ছিলাম একদিন মেহেদী ভাইয়ের সাথে। তখন শেয়ার করলাম এই ঘটনা। শুনে মেহেদী ভাই বললেন আরে কমিক্স করে ফেলো। তখন বেশ সিরিয়াস হয়েই আসিফ ভাইয়ের সাথে আলাপ আলোচনা করে বুদ্ধিশুদ্ধি নিয়ে লুঙ্গিম্যানের ক্যারেক্টার টা দাঁড় করিয়ে ফেললাম। কি হতে পারে তার কাজ, কি হতে পারে তার সুপারপাওয়ার এসব। আর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম এইবার নিজের এই প্রজেক্ট দাঁড় করাবোই। কোন এক্সকিউজ দেখাবোনা নিজেকে। সে সিদ্ধান্তকে সিরিয়াস করার জন্য Colors FM এর তাহসীন সালমান ভাইয়ের কমিকবাজ প্রোগ্রামে লুঙ্গিম্যানের কথা বলে ফেললাম মার্চেই।
(কালারস এফ এম এর কমিকবাজ তাহসীন ভাইয়ের সাথে।
জীবনের প্রথম রেডিও শো।)
তাহসীন ভাইও শুনে বেশ উতসাহ দিলেন। বললেন আরে করে ফেলো। দারুন হবে। শুরু করে দিলাম কাজ। ক্লায়েন্টদের কাজের ফাঁকেই ঢাকা কমিক্স স্টুডিওতে গিয়ে মেহেদী ভাইয়ের সাথে বসে বসে লুঙ্গিম্যানের অরিজিন স্টোরি, প্রথম ইস্যু এর প্লট রেডি করলাম, ক্যারেক্টার ডিজাইন করলাম বেশ কয়েক ধাপে। গল্পের ভিলেন আর অন্যান্য ক্যারেক্টারগুলির ডিজাইন, কমিক্সের পেজের রাফ করে ফেললাম। এর মাঝে বেশ কবার লুঙ্গিম্যানের ক্যারেক্টার চেঞ্জ করেছি আমি। যাই করি পছন্দ হয়না নিজের। আবার কনফিউশনও ছিল অনেক।
(লুঙ্গিম্যান চরিত্রের প্রাথমিক কিছু ডিজাইন। শেষের ডিজাইনটি ফাইনাল করেছিলাম মেহেদী ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে।)
লুঙ্গিম্যানের ফাইনাল Turn-Around শিট
পূর্ব তুফাননগরের মেয়র চিকনগুনি
পশ্চিম তুফাননগরের মেয়র মোটাগুনি
ক্যারেক্টার প্রপোরশন শিট
এর মাঝে অন্য কমিক্স নিয়ে কাজ করেছি যার কারনে লুঙ্গিম্যান এর প্রজেক্ট আবার স্থগিত রাখা হলো। এর মধ্যে চলে এলো অক্টোবর মাস। আর্টিস্টদের সেলফ চ্যালেঞ্জ ইভেন্ট Inktober এ আবার লুঙ্গি ম্যানকে নিয়ে কাজ শুরু করবো সিদ্ধান্ত নিলাম। এবং অক্টোবরের শুরু থেকেই বিভিন্ন কনসেপ্ট আর পোজ আঁকা শুরু করলাম।
Inktober #1
Inktober #2
Inktober #7
এঁকে ফেসবুকে পোস্ট করা শুরু করার পর টের পেলাম লুঙ্গি ম্যানকে অনেকে পছন্দ করছে। সরাসরি, টেক্সটে, কমেন্টে অনেকে উতসাহ দিলেন। অনেক সিনিয়র আর ফেলো আর্টিস্ট বললেন কাজটা ভাল হচ্ছে। আমার গুরু মেহেদী ভাই, আসিফ ভাই, বন্ধু অ্যাড্রিয়েন সহ অনেকের কাছ থেকে ফ্যান আর্ট পেলাম।
মেহেদী ভাইয়ের ফ্যান আর্ট
আসিফ ভাইয়ের ফ্যান আর্ট
আরহাম হাবিব এর ফ্যান আর্ট
তীর্থ ভাইয়ের ফ্যান আর্ট
দেবাদৃতা পিউ' এর ফ্যান আর্ট
বন্ধু অ্যাড্রিয়েনের ফ্যান আর্ট
আর আমি আরো উতসাহ পেয়ে গেলাম। যে কনফিউশনটা ছিল সেটা দূর হয়ে গেলো আমার। সবচেয়ে বেশি উতসাহ পেলাম বাতিঘরে অনুষ্ঠিত হওয়া Dhaka Comics এর প্রথম আড্ডায়। লুঙ্গি ম্যানকে নিয়ে যখন কথা বলছিলাম তখন সরাসরিই ঢাকা কমিক্সের পাঠকদের রেসপন্স পেলাম। কথা দিয়ে আসলাম সবার সামনে। এর মাঝে লুঙ্গিম্যানকে নিয়ে হালকা পাতলা জটিলতাও হলো! বস আহসান হাবিব এর হস্তক্ষেপে সে জটিলতার সমাধান শেষে আর কোন বাধা রইলোনা। এরপর টানা দুই তিন মাস কাজ করে লুঙ্গিম্যানের প্রথম ইস্যুর কাজ শেষ করলাম ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে। আর সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঢাকা কমিক্স এহেকে লুঙ্গিম্যান পাবলিশ হলো ১৫ তারিখে।
বস মনে কিছু একটা বলেছিলেন। সবাই কেলাচ্ছিলাম খুব।
ফেব্রুয়ারির ১৭ তারিখে বস আহসান হাবীব, মেহেদী ভাই, আসিফ ভাই, সব্যসাচী সহ আরো অনেকের উপস্থিতিতে ঢাকা কমিক্সের স্টলের সামনে লুঙ্গিম্যান প্রথম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হলো। মনে রাখার মতো একটা ঘটনা এটা আমার জীবনে। বইমেলার মাঝেই লুঙ্গিম্যান ফ্যান আর্ট প্রতিযোগিতা হয়েছিল। ওইদিনই বিকেলে ফ্যান আর্ট প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার হিসেবে কমিক্সের কপি আর লুঙ্গি, গামছা উপহার দেওয়া হলো। :D
বাম থেকে মেহেদী ভাই, দ্বিতীয় প্রতিযোগী সর্নাব, আমি, প্রথম প্রতিযোগী আপন আর তৃতীয় প্রতিযোগী সিফাত।
সব মিলিয়ে বেশ ভালই সাড়া পেয়েছি রিডারদের কাছ থেকে। স্টোরিটেলিংয়ে গড়বর ছিল আমার। প্রথম ইস্যুতে লুঙ্গিম্যান এর উপস্থিতি কম ছিল বলে অনেকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি যার কারনে নেক্সট ইস্যুর স্টোরির জন্য অনেক ভেবেছি আর সময় দিয়েছি। এই মুহূর্তে কাজ চলছে লুঙ্গিম্যান এর দ্বিতীয় ইস্যুর। আশা করি আগের চাইতে ভাল কাজ করতে পারবো। বইমেলার সময় অনিক ভাই এসে একটা ইন্টার্ভিউও নিয়েছিলেন আমার। বাই দ্যা উয়ে অনিক ভাইয়ের একটা স্ক্রিপ্টেও দেশি বেশ কয়েকজন সুপারহিরো ছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিল লুঙ্গিম্যান। :D
ইন্টার্ভিউটি দেখতে চাইলে ক্লিক করুন এই লিংকে আর লুঙ্গিম্যান এর প্রথম ইস্যু কিনতে চাইলে ক্লিক করুন এই লিংকে।