শেষ হয়ে গেলো প্রাণের মেলা বইমেলা। কিভাবে কিভাবে যেন ২৮ টা দিন পার হয়ে গেলো টেরই পেলাম না। অসাধারন সব দিন কেটেছে কিছু ঝামেলা ছাড়া। প্রথম দশ দিন পর্যন্ত ব্যস্ত ছিলাম বই আর কমিক্সের কাজ নামানো আর ডেলিভারি নিয়ে। সেই সাথে ছিল কিছু দেশি ফ্রিল্যান্স কাজ। এর মাঝে কয়েকবার স্টলে যাওয়া হয়েছে। সব কাজ ডেলিভারি শেষে আর নতুন কোন কাজ নেইনি। এরপর বেশিরভাগ দিনই গিয়েছি হয় স্টলের জন্য বই নিয়ে অথবা বন্ধুবান্ধবের ডাকে। মেহেদী ভাইয়ের নেতৃত্বে সবাই সিএনজি নিয়ে স্টুডিও থেকে বইয়ের বান্ডেল নিয়ে প্রথমে যেতাম দোয়েল চত্বর বা টিএসসি। এরপর সেখান থেকে কাঁধে মাউন্টেন ব্যাগে করে ট্র্যাকিংয়ে যাওয়ার মতো করে বই নিয়ে স্টলে যেতাম। কোন কোন দিন আগেভাগে বের হতে পারলে মেলা শুরু হওয়ার আগেই সিএনজি নিয়েই মেলাতে সোজা স্টলের সামনে। বেশ মজার ব্যাপার ছিল সব। একেকদিন একেক রকম পরিস্তিতি। স্টলে বসতাম ছুটির দিন আর বিশেষ দিনগুলিতে। মোটামুটি সব স্টলে উপচে পড়া ভিড় থাকে ছুটির দিনগুলিতে। একেক ধরনের কাস্টমার এর সাথে একেক ভাবে ডিল করার অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন ধরনের ক্যারেক্টার দেখতে পাওয়া সহ হাস্যকর অথবা বিরক্তিকর ঘটনার সম্মুখীন হওয়া, দেশের কমিক্স রিডারদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ, তাদের মতামত শোনা সব মিলিয়ে দারুন। আর প্রায় প্রতিদিনই পরিচিত কারো না কারো সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা আরো দারুন। পরিচিত আর্টিস্ট, লেখক রা স্টলে আসলে আড্ডা হতো আর বন্ধুরা বা সিনিয়র জুনিয়র ভাই বোনেরা মেলায় আসলেই কল করে চলে আসতো স্টলে। চলতো ঘুরাফেরা, কফি খাওয়া, বই কেনা আর আড্ডাবাজি। সারাদিন শেষে রাত নটা বাজে স্টল বন্ধ করে আমরা ঢাকা কমিক্স এর সবাই বের হয়ে একত্রিত হতাম বস আহসান হাবিব এর উন্মাদ দলের সাথে । এরপর সবাই মিলে অথবা একেকজন একেকদিকে বাসায় ফেরার পালা। এই ফেরার সময়ও বেশ আড্ডা দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় আসা, স্টলের শাহ আলম ভাইকে গুঁতানো এসবে সময় পার হয়ে গেলো কিভাবে কিভাবে। কেমন যেন ঘোরের মধ্যেই। তেমন কোন কাজ করা হয়নি ফেব্রুয়ারি তে। মেহেদী ভাইয়ের ব্যস্ততা কি এইবার দেখেছি। মানুষটা কিছুক্ষণ বাসায় কিছুক্ষণ স্টুডিও তে আবার কিছুক্ষণ নিউ এইজে আবার মেলায়। এর মাঝেই সামলেছেন নতুন বেশ কিছু কমিক্স এর এডিটিং আর কভার এর কাজ আর বইয়ের কাজ। বাপরে বাপ। কেমনে পারেন ! দেখেছি আর অবাক হয়েছি।
মেলার লাস্ট কিছুদিন পার হয়েছে সব্যসাচীর সাথে ঘুরাফেরা করে আর দৌড়াদৌড়ি করে। সে প্রতিদিন বলে রোমেল দা আজকে ঘুরতে ঘুরতে আমরা ঘোড়া হয়ে যামু আর দেখা যেতো আমরা আক্ষরিক অর্থেই ঘোড়া হয়ে গিয়েছি। :v
আজ গুরু মেলার এন্ডীং পার্টি দিলেন হাতির পুল এর ক্যাফে ফাইভে। ছিলেন মেহেদী ভাই, মিতু আপু, সম্পদ ভাই, মাহবুব ভাই, আসিফ ভাই, শোভন, শাহ আলম, সব্যসাচী আর আমি। দারুন একটা আড্ডা শেষে হায়দারাবাদি বিরিয়ানি দিয়ে পেটপুজো করে নিচে নেমে আবার চা আর আড্ডা। আড্ডা শেষে আমি আসিফ ভাই আর শোভন চলে এলাম বাতিঘর লাইব্রেরী তে। বাকিরা নিজ নিজ ডেরায়। চিটাগাং এর বাতিঘর এ যাওয়া হয়েছে অনেকবারই। কিন্তু ঢাকার বাতিঘর এ যাওয়া হয়নি। আজ চলে গেলাম। বই কিনলাম কিছু সেবা প্রকাশনির। ওখান থেকে বেরিয়ে সোজা সিনেপ্লেক্স। ব্ল্যাক প্যান্থার দেখলাম তিনজনে। মুভি দেখা শেষে বাসায় এসে শান্তি।
বইমেলার মাঝেই মাথায় বেশ কিছু গল্পের আইডিয়া এসেছে। এদের মধ্যে একটার অরিজিন প্লট মোটামুটি গুছিয়ে এনেছি বইমেলার মধ্যেই। এই মাসের মধ্যেই নামিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা আছে প্লটটাকে কমিক্স হিসেবে। দেখা যাক কি হয়। আলসেমি আর বাইক্যা কাজ বাদ দিতে হবে। এইসব করে করে নিজের বারোটা বাজাচ্ছি। -_-
No comments:
Post a Comment