Tuesday, November 7, 2017

গুরু মেহেদী হক, ঢাকা কমিক্স এবং অন্যান্য

মেহেদী ভাই সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি ২০১২ এর শুরুতে। ফেসবুকে একটি টিউটোরিয়াল এর লিংক পেয়েছিলাম। ওই টিউটোরিয়াল দেখার আগ পর্যন্ত আমার মধ্যে বিস্ময় কাজ করতো, রস আলো, বিচ্ছু বা অন্যান্য ফান ট্যাবলয়েড গুলির কার্টুন এর কালার দেখে। দেখতাম আর ভাবতাম কিভাবে এই রঙ ম্যানেজ করে!!! ছোটবেলায় আঁকাআঁকির ঝোঁক ছিল বেশ। স্কুলে পড়াকালীন সময়ে আঁকতাম সময় পেলেই এটাসেটা। সুইডিশ পলিটেকনিকে পড়ার সময়ও আঁকাআঁকি করতাম এখানে সেখানে চিকা মারতাম। ডুয়েট অ্যাডমিশনে এসে আঁকাআঁকি লাটে উঠে। পরে ডুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর মেহেদী ভাইয়ের টিউটোরিয়াল পেয়ে অনেক কিছুর উত্তর পেয়ে যাই আর সে এক টিউটোরিয়ালেই আমার আঁকিয়ে সত্বা আবার জেগে উঠে আর মেহেদী ভাইকে গুরু বানিয়ে ফেলি মনে মনে :D । যাই হোক আঁকাআঁকি করতে লাগলাম ভুলভাল ভাবে (এখনো ভুলভালই আঁকি)! আকান্তিস গ্রুপে মেহেদী ভাই আসিফ ভাই সহ অন্যান্য সিনিয়র আর্টিস্টদের হেল্প পেতাম চাইলেই বা অনেক সময় না চাইতেও। যেসব ছিল পরম পাওয়া। ২০১৫ এর শেষ দিকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ডিগ্রী নিয়ে এটাসেটা শেষে যখন ২০১৬ তে এসে আঁকাআঁকিতেই ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম তখন থেকেই সিরিয়াসলি ভাবা শুরু । পরপর করে ফেললাম মেহেদী ভাইয়ের কার্টুনিং কোর্স আর আসিফ ভাইয়ের কমিক্স ড্রয়িং কোর্স। সে সময় থেকেই উনাদের কাছাকাছি আসা শুরু। এরপর গাজীপুরের পাট চুকিয়ে ঢাকায় এসে খুঁটি গাড়লাম। গুরুর পরামর্শে দৈনিক যুগান্তর এ জয়েন করলাম। আর পাশাপাশি ঢাকা কমিক্স এর ছোটখাটো কাজ তো আছেই। বিদেশি ফ্রিল্যান্স এর কাজ কমিয়ে দিলাম। পরিচিত কয়েকজন ক্লায়েন্ট ছাড়া কাজ আর করিই না ধরতে গেলে। এক বছর হয়ে গেলো দৈনিক যুগান্তর এর চাকরি জীবনের। এর মাঝে অনেক কিছু শিখেছি, শিখছি শিখছি শিখছি......
ফেসবুকে অ্যাক্টিভিটি কমিয়ে দিলাম। প্রায় সময় অফ করে রাখি অ্যাকাউন্ট। অফিসের কাজ আর ফ্রিল্যান্স কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকি প্রায় সময়। এর মাঝেই ঢাকা কমিক্স স্টুডিওতে যাই সময় পেলেই। আড্ডা মারি, শিখি, কাজ করি আর আসিফ ভাই মেহেদী ভাইয়ের বুদ্ধি আর প্রফেশনাল অ্যাডভাইস নেই। :D
এই গেলো অক্টোবরে হয়ে গেলো Inktober. প্রথম বারো তেরো দিন এঁকেছিলাম তাড়াহুড়ো করে প্রতিদিন কিছু না কিছু একটা। একটা ৩৭ পেজের কমিক্স এর কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় কাটছে। সাইন্স ফিকশন আর একটু সিরিয়াস ধরনের। যার কারনে আমার অনেক কিছু শিখতে জানতে হচ্ছে। রাইটার একটা ক্লাস নাইন পড়ুয়া পিচ্চি। ওর সাথে ডিসকাস করে করে কমিক্সটার স্টোরিলাইন আর থাম্বনেল করতেই এক মাস লেগে গিয়েছিল। ওটা আর অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ততা চলছে। তো যাই হোক। ইঙ্কটোবারের মাঝামাঝি সময়ে একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি মেহেদী ভাইয়ের টেক্সট। "সময় পেলে স্টুডিওতে আসো। তোমার ইঙ্কটোবার এর কাজ রিলেটেড। দিলাম দৌড় নাকেমুখে দুটো গুঁজেই। এর আগের রাতে ইঙ্কটোবার এর জন্য একটা ডায়নামিক পোজ আঁকতে গিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়েছিলাম। শেষে হাল ছেড়ে হতাশ হয়ে আর করা হয়নি। স্টুডিওতে গিয়েই দেখালাম ওটা গুরু কে। আমাকে যেতেই বলেছিলেন আমার আঁকা দেখে। আমাকে এক ঘণ্টার মতো দেখালেন আমার কোথায় ভুল হচ্ছে, কেন এমন হচ্ছে, কি করলে ভাল হবে এসব। এরপর কিছু টাস্ক দিলেন। বললেন এসব করে আমাকে দেখাবা নেক্সট টাইম। হেহে করে চলে আসলাম। :D
এর মাঝে আর যাওয়া হয়নি। আসিফ ভাইয়ের একটা ৪০ পেজের কমিক্সের কালার আর পিচ্চির সাইফাই কমিক্সটা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারনে। এখনো ব্যস্ত এই দুইটা প্রজেক্ট নিয়ে। আসিফ ভাইও আসছেনা ল্যাপটপ নষ্ট বলে, গুরুও ছিলেন না বেশ কিছুদিন।
গতকাল গিয়েছিলাম একটা কাজে স্টুডিওতে। দেখালাম এর মাঝে করা কিছু প্র্যাকটিস ফিগার। গুরু দেখে রিভিউ দিলেন, আবার দেখিয়ে দিলেন কিছু বেসিক। কমিক্স নিয়ে আড্ডা হলো, যে কাজটি করছি সেটার কিছু প্রব্লেম সল্ভ করলাম। ঘণ্টাখানেক আড্ডা শেষে ফিরে এলাম আমার ব্যাটকেভে।
মাঝে মাঝে টের পাই আমি কতো লাকি! মেবি বাংলাদেশে নতুন কমিক আর্টিস্টদের মধ্যে আমি সবচে বেশি ভাগ্যবান মানুষটা! ভাল্লাগে মাঝেমাঝে খুব!





স্কেচবুক থেকে গুরুর সাজেশন ওয়ালা কয়েকটা পেজ তুলে রাখি।


নোট ফর দাইসেলফঃ এই পেজগুলি সহ বাকিপেজ গুলি আছে Inktober 2017 আর অক্টোবর ২০১৭ এর স্কেচবুকে

No comments:

Post a Comment